গ্রাম পজিটিভ ও গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া: তাদের পার্থক্য কি?
গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ, যদিও আমরা প্রায়ই এগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে অজ্ঞ থাকি। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের শরীরের ভেতরে এবং বাইরে বাস করে এবং এগুলোর কিছু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও অন্যগুলি আমাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই ব্লগ পোস্টে, আমি গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করব এবং আমাদের স্বাস্থ্যে এগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। এই পোস্টটি পড়ার পরে, আপনি এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর মৌলিক বৈশিষ্ট্য, এগুলোর স্বাস্থ্যের প্রভাব এবং বিভিন্ন রোগে এগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া কী?
গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়াগুলি ব্যাকটেরিয়ার একটি বড় গ্রুপ যার একটি নির্দিষ্ট ধরনের κυটোপ্লাজমিক মেমব্রেন রয়েছে। এগুলোকে গ্রাম স্টেইন নামে একটি বিশেষ রঞ্জন প্রক্রিয়ায় সনাক্ত করা হয়।
এই স্টেইনটি ব্যাকটেরিয়ার কোষগুলিকে বেগুনি বা নীল রঙিন করে। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়াগুলির মধ্যে স্ট্যাফিলোককাস, স্ট্রেপ্টোককাস এবং ক্লোস্ট্রিডিয়াম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি বিভিন্ন সংক্রমণের কারণ হতে পারে, যেমন নিউমোনিয়া, মস্তিষ্কের আবরণীতে প্রদাহ এবং খাদ্য বিষক্রিয়া।
কোষের দেয়ালের গঠন অনুযায়ী חייদানুকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যাদের কোষের দেয়াল মোটা হয় তাদেরকে গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া এবং যাদের কোষের দেয়াল পাতলা হয় তাদেরকে গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বলা হয়। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার কোষের দেয়াল মোটা হয় কারণ তাদের কোষের দেয়ালে পেপ্টিডোগ্লাইকানের একটি পুরু স্তর থাকে। পেপ্টিডোগ্লাইকান হচ্ছে একধরনের কার্বোহাইড্রেট যা ব্যাকটেরিয়ার কোষের দেয়ালের মূল উপাদান। গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার কোষের দেয়াল পাতলা হয় কারণ তাদের কোষের দেয়ালে পেপ্টিডোগ্লাইকানের একটি পাতলা স্তর থাকে। পেপ্টিডোগ্লাইকানকে লিপোপলিস্যাকারাইডের একটি স্তর দ্বারা আবৃত করে, যা একটি বিশেষ ধরনের চর্বিযুক্ত শর্করা।
গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য অনেকটা। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির হয়, যখন গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত রড আকৃতির হয়। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত অ্যানারোবিক হয়, যার অর্থ তারা অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে, যখন গ্রাম
নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত এ্যারোবিক হয়, যার অর্থ তাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত গ্রাম স্টেইন দ্বারা বেগুনি বা নীল রঙিন হয়, যখন গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত গ্র
গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া কী?
গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া হ’ল এমন একধরনের ব্যাকটেরিয়া যাদের কোষপ্রাচীরের গঠনে গ্রাম স্টেইন ব্যবহার করে রঙিন হয় না। এই ব্যাকটেরিয়াগুলিকে তাদের কোষপ্রাচীরের পুরুত্ব অনুসারে দুটি উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত করা হয়েছে:
- পাতলা-প্রাচীর গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া: এই ব্যাকটেরিয়াগুলিতে একটি পাতলা, একক ঝিল্লিযুক্ত কোষপ্রাচীর থাকে যা লিপোপলিস্যাকারাইড (এলপিএস) দ্বারা আবৃত থাকে। এলপিএস একটি শক্তিশালী প্রদাহজনক অণু যা মানুষের মধ্যে সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
- মোটা প্রাচীর গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া: এই ব্যাকটেরিয়াগুলিতে পুরু, জটিল কোষপ্রাচীর থাকে যা লিপোপলিস্যাকারাইডের বহিরাগত ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে। প্যাথোজেনিক প্রজাতিগুলির মধ্যে এলপিএস সাধারণত দুর্বল বা অনুপস্থিত থাকে।
গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে বিতরণ করা রয়েছে এবং বিভিন্ন আবাসস্থলে পাওয়া যায়। তারা মানব দেহের সাধারণ বাসিন্দাও হতে পারে, যেখানে তারা উভচর হিসাবে বসবাস করে বা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। কিছু সাধারণ গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে রয়েছে এশেরিচিয়া কোলাই, সালমোনেলা, এবং নিসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস।
গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য
গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার প্রাথমিক পার্থক্য হলো তাদের কোষ প্রাচীর গঠন। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার মোটা পেপ্টিডোগ্লাইকানের একটি প্রাচীর থাকে, যার বাইরের স্তরে টিচোইক অ্যাসিড ও লিপোটিচোইক অ্যাসিড থাকে। অন্যদিকে, গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার একটি পাতলা পেপ্টিডোগ্লাইকান প্রাচীর থাকে যার বাইরের স্তরে লিপোপলিস্যাকারাইডের (এলপিএস) একটি ঝিল্লি থাকে যা ব্যাকটেরিয়াকে গ্রাম স্টেইনিং বিধিতে বেগুনি রঙ দেয়।
এই ভিন্নতাগুলো তাদের প্রতিজীবক সংবেদনশীলতায়ও প্রভাব ফেলে। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত পেনিসিলিন ও ভ্যানকোমাইসিনের মতো গ্রাম পজিটিভ-নির্দিষ্ট প্রতিজীবকের প্রতি সংবেদনশীল, যখন গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত সেফট্রিয়াক্সোন ও আমিকাসিনের মতো গ্রাম নেগেটিভ-নির্দিষ্ট প্রতিজীবকের প্রতি সংবেদনশীল।
এছাড়াও, গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ব্যাকটেরিওফেজের প্রতি কম সংবেদনশীল হয় যা ব্যাকটেরিয়াকে সংক্রমিত করে এবং ধ্বংস করে, যখন গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া এদের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়।
মানব স্বাস্থ্যে গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা
গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া হলো পৃথিবীতে সর্বব্যাপী দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত তাদের ঘূর্ণাকার আকারের দ্বারা চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের কোষের দেয়ালে পেপ্টিডোগ্লাইকানের একটি পুরু স্তর থাকে। অন্যদিকে, গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াগুলির একটি পাতলা কোষের দেয়াল থাকে এবং তাদের কোষে একটি বাহ্যিক ঝিল্লি থাকে।
আমাদের শরীরে গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া উভয়ই পাওয়া যায়। কিছু ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের জন্য উপকারী, যেমন Lactobacillus acidophilus, যা আমাদের অন্ত্রে বাস করে এবং হজমে সাহায্য করে। অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকারক হতে পারে, যেমন স্ট্রেপটোককাস এবং স্টাফাইলোককাস, যা সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াগুলির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো তাদের প্রতি অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা। গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ভ্যানকোমাইসিন এবং লাইনজোলিডের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল, যেখানে গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া এই ঔষধগুলির প্রতি প্রতিরোধী হতে পারে।
আপনার শরীরে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। যদি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরে অত্যধিক হয়ে ওঠে তবে এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আপনি প্রোবায়োটিকস খেয়ে বা এরিথ্রোমাইসিনের মত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে আপনার শরীরে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারেন।
রোগে গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা
গ্রাম-পজিটিভ এবং গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার দুটি প্রধান শ্রেণি, যেগুলো তাদের কোষ প্রাচীরের গঠনের উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এই শ্রেণিবিন্যাসটি ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজিতে ব্যাকটেরিয়ার চিহ্নিতকরণ এবং রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর মূলত পেপ্টিডোগ্লাইকান দ্বারা গঠিত, যা একটি পুরু স্তর তৈরি করে এবং গ্রাম দাগে বেগুনি রঙ ধারণ করে। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে স্ট্যাফিলোককাস, স্ট্রেপ্টোককাস এবং অ্যাক্টিনোমাইসেস উল্লেখযোগ্য। গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরে একটি পাতলা পেপ্টিডোগ্লাইকান স্তর এবং লিপোপলিস্যাকারাইডের একটি বহিরাগত স্তর থাকে, যা গ্রাম দাগে গোলাপি রঙ ধারণ করে। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে এশেরিচিয়া কোলাই, সালমোনেলা এবং নিসেরিয়া উল্লেখযোগ্য।
গ্রাম-পজিটিভ এবং গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে রোগপ্রতিরোধকতার পার্থক্য রয়েছে। গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ভ্যানকোমাইসিন এবং এর্থ্রোমাইসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল, যখন গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া সিফট্রিয়াজোন এবং অ্যামিকাসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল। এই পার্থক্যগুলি সংক্রমণের চিকিৎসার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ।
সারাংশ
গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়াকে বোঝায় যেগুলিকে তাদের কোষের দেওয়ালের রাসায়নিক গঠন অনুসারে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এই শ্রেণীবিভাগ বিভিন্ন ল্যাবরেটরি পরীক্ষা এবং চিকিৎসাগত নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পোস্টে, আমরা গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে পার্থক্য, তাদের বৈশিষ্ট্য এবং গ্রাম স্টেইনিং পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।