হাইড্রোজেন গ্যাস কি পানিতে দ্রবীভূত হয়? জেনে নিন এখনই!
আজকের আর্টিকেলে, আমরা পানিতে হাইড্রোজেন গ্যাসের দ্রাব্যতা নিয়ে আলোচনা করব। হাইড্রোজেন একটি অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল মৌল যা পানির সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে। আমরা ব্যাখ্যা করব যে হাইড্রোজেন এবং পানি কি, সেইসাথে পানিতে হাইড্রোজেনের দ্রাব্যতা কীভাবে পরিমাপ করা যায়। তাছাড়া, আমরা হেনরির আইন এবং এর পানির সাথে হাইড্রোজেনের মিথষ্ক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে প্রয়োগটিও পর্যালোচনা করব। শেষে, আমরা আমাদের আলোচনার উপসংহার টানব এবং পানিতে হাইড্রোজেনের দ্রাব্যতা সম্পর্কে আপনার বোঝাপড়া উন্নত করার জন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং উদাহরণ প্রদান করব।
পানিতে হাইড্রোজেন গ্যাসের দ্রাব্যতা
মূলত হাইড্রোজেন পানির চেয়ে হালকা একটি দাহ্য গ্যাস। ঘরের তাপমাত্রায় এটি পানিতে দ্রবীভূত হয় না। তবে কম তাপমাত্রায় এবং উচ্চ চাপে হাইড্রোজেন পানিতে দ্রবীভূত হতে পারে। হাইড্রোজেনের পানিতে দ্রাব্যতা হল 1.8 মিলিলিটার হাইড্রোজেন প্রতি 100 মিলিলিটার পানিতে। অর্থাৎ, 100 মিলিলিটার পানিতে সর্বোচ্চ 1.8 মিলিলিটার হাইড্রোজেন গ্যাস দ্রবীভূত হতে পারে। তাপমাত্রা বাড়লে হাইড্রোজেনের পানিতে দ্রাব্যতা কমে যায়। অন্যদিকে, চাপ বাড়লে হাইড্রোজেনের পানিতে দ্রাব্যতা বাড়ে।
হাইড্রোজেন কি?
হাইড্রোজেন, একটি নিরপেক্ষ গ্যাস, সাধারণভাবে পানিতে খুব সামান্য দ্রবণীয়। আদর্শ তাপমাত্রা এবং চাপে, পানিতে হাইড্রোজেনের দ্রাব্যতা প্রায় 0.018%। এর অর্থ হল প্রতি 100 গ্রাম পানিতে মাত্র 0.018 গ্রাম হাইড্রোজেন দ্রবীভূত হতে পারে। এই দ্রাব্যতা একটি কারণ হিসাবেই জলের ইলেক্ট্রোলাইসিসে হাইড্রোজেন দ্রুত পানি থেকে বেরিয়ে আসে এবং পানির উপরে একটি স্তর গঠন করে।
এই সামান্য দ্রাব্যতার কারণ হল হাইড্রোজেন একটি অ-মেরু গ্যাস। অ-মেরু গ্যাসগুলির কোনো মেরুতা নেই, অর্থাৎ তাদের ইলেকট্রনগুলি সমানভাবে বিতরণ করা হয় এবং তাদের আধান নেই। অপরপক্ষে, পানি একটি মেরু দ্রাবক, অর্থাৎ এটিতে আংশিক ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক আধান রয়েছে। মেরু গ্যাসগুলি মেরু দ্রাবকগুলিতে ভালভাবে দ্রবীভূত হয় কারণ তাদের বিরুদ্ধ মেরুতাগুলি একে অপরের দিকে আকর্ষণ করে। যাইহোক, যেহেতু হাইড্রোজেন অ-মেরু, তাই এটি পানিতে খুব সামান্য দ্রবীভূত হয়।
পানি কি?
পানি হল একটি মৌলিক পদার্থ যা হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের পরমাণু দ্বারা গঠিত একটি যৌগ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রচুর পদার্থগুলির মধ্যে একটি। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের 71% জুড়ে রয়েছে এবং পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর শরীরের একটি প্রধান উপাদান।
মূলত পানি একটি স্বচ্ছ, গন্ধহীন, স্বাদহীন তরল। এটি তরল, কঠিন (বরফ) এবং গ্যাস (জলীয় বাষ্প) তিনটি প্রধান অবস্থায় বিদ্যমান। পানি একটি উচ্চ ঘনত্বের পদার্থ, যা এটিকে অন্যান্য তরলের চেয়ে ভারী করে তোলে। এটি স্থানীয় স্থানের উপর নির্ভর করে 100 ডিগ্রি সেলসিয়াস (212 ডিগ্রি ফারেনহাইট) তে ফুটে এবং 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস (32 ডিগ্রি ফারেনহাইট) তে জমাট বাঁধে।
পানি একটি অসাধারণ পদার্থ কারণ এটি প্রচুর পরিমাণে দ্রাবক। এটি বিভিন্ন প্রকারের যৌগ এবং পদার্থ দ্রবীভূত করতে পারে, যা এটিকে বিভিন্ন জৈবিক এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম করে তোলে। এটি তাপ এবং শব্দের একটি ভাল পরিবাহকও বটে।
এখানে পানি পৃথিবীর জীবনের জন্য অপরিহার্য। এটি সকল জীবন্ত প্রাণীর একটি প্রধান উপাদান এবং শরীরের নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি পরিবহন এবং বর্জ্য নিষ্কাশন সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। জলজ প্রাণীদেরও তাদের বেঁচে থাকার জন্য পানির প্রয়োজন হয়।
পানি মানব সভ্যতা এবং অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পানীয় জল, সেচ, পরিবহন এবং শক্তি উৎপাদন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। পানির সংস্থান বজায় রাখা এবং জল দূষণ রোধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত উদ্বেগ, কারণ পানি মানুষ এবং গ্রহ উভয়েরই স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
দ্রাব্যতা কীভাবে পরিমাপ করা হয়
সেটি বুঝতে হলে প্রথমে আপনাকে দ্রাব্যতা কী তা বুঝতে হবে। দ্রাব্যতা হল একটি দ্রষ্টব্য পদার্থের সর্বাধিক পরিমাণ যা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি দ্রাবকে দ্রবীভূত হতে পারে। এটি সাধারণত গ্রাম প্রতি লিটারে (g/L) বা মোলারিটি (M) এককে প্রকাশ করা হয়।
দ্রাব্যতা পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। একটি সাধারণ পদ্ধতি হল স্যাচুরেশন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে, আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবকে একটি পরিচিত পরিমাণ দ্রষ্টব্য পদার্থ যোগ করেন। আপনি যতক্ষণ না পর্যন্ত আরও দ্রষ্টব্য পদার্থ দ্রবীভূত হওয়া বন্ধ হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি মিশ্রণটি নাড়তে থাকেন। এই সময়ে, দ্রষ্টব্য পদার্থের অতিরিক্ত পরিমাণটি দ্রবণের তলদেশে জমা হবে। আপনি দ্রবীভূত দ্রষ্টব্য পদার্থের পরিমাণ নির্ধারণ করতে এবং তারপর দ্রাব্যতা গণনা করতে দ্রবণ এবং অবশিষ্ট দ্রষ্টব্য পদার্থের ভর মাপতে পারেন।
আপনি স্পেকট্রোফটোমেট্রি বা ক্রোমাটোগ্রাফি ব্যবহার করেও দ্রাব্যতা পরিমাপ করতে পারেন। এই পদ্ধতিগুলি দ্রবণে দ্রষ্টব্য পদার্থের ঘনত্ব নির্ধারণ করে এবং তারপর দ্রাব্যতা গণনা করে।
দ্রাব্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য কারণ এটি দ্রবীভূতকরণ প্রক্রিয়াগুলিকে বোঝাতে এবং নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে সিস্টেমের কর্মক্ষমতা পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করে।
হেনরির আইন
অনুসারে, তরল পদার্থের তাপমাত্রা ধ্রুব থাকলে, তরলের একক আয়তনে দ্রবীভূত গ্যাসের আয়তন গ্যাসের আংশিক চাপের সমানুপাতিক হয়। অন্য কথায়, তরলের একই আয়তনে দ্রবীভূত গ্যাসের আয়তন যত বেশি হবে, গ্যাসের আংশিক চাপও তত বেশি হবে। তরল পদার্থের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে তরলে দ্রবীভূত গ্যাসের আয়তন হ্রাস পায়, কারণ উচ্চতর তাপমাত্রায় গ্যাসের আণুগুলির গতি বৃদ্ধি পায় এবং তাদের তরলের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার সময় কমে যায়। এই আইন অনুযায়ী, হাইড্রোজেন গ্যাস পানিতে দ্রবীভূত হয়। যত বেশি হাইড্রোজেন গ্যাস পানিতে দ্রবীভূত হবে, পানির আংশিক চাপ তত বেশি হবে।
উপসংহার
এই আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে হাইড্রোজেন গ্যাস পানিতে দ্রবীভূত হতে পারে, তবে এটি খুবই সীমিত পরিমাণে ঘটে। বিভিন্ন তাপমাত্রা এবং চাপের ক্ষেত্রে দ্রাব্যতা পরিবর্তিত হয়, কিন্তু সাধারণত এটি 25°C তাপমাত্রা এবং 1 atm চাপে পানির প্রতি লিটারে প্রায় 0.018 মিলিলিটার হয়। যখন হাইড্রোজেন গ্যাস পানিতে দ্রবীভূত হয়, তখন এটি হাইড্রোজেন আয়ন এবং হাইড্রোক্সাইড আয়ন তৈরি করে, যা পানির pH কে সামান্য কমাতে পারে। তবে, এটি এতটাই সামান্য পরিমাণে দ্রবীভূত হয় যে এটি সাধারণত পানির গুণমানের জন্য কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটায় না।