রাসায়নিক বন্ধন কত প্রকার? জেনে নিন এর মূলনীতি এবং প্রকারভেদ
রসায়নের জগতে, রাসায়নিক বন্ধন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা মৌলের পরমাণুগুলিকে একত্রে ধরে রাখে এবং পদার্থের গঠন ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে। এই আকর্ষণীয় শক্তি বুঝতে পারা আমাদেরকে পদার্থের বিভিন্ন ধর্ম ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে, যেমন তাদের প্রতিক্রিয়াশীলতা, গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক। এই ব্লগ পোস্টে, আমি রাসায়নিক বন্ধনের বিভিন্ন প্রধান শ্রেণীবিভাগের একটি বিস্তারিত ওভারভিউ উপস্থাপন করব, বিশেষ করে আয়নিক, সমযোজী, ধাতব, হাইড্রোজেন এবং ভ্যান ডের ওয়ালস বল। আমরা প্রতিটি ধরনের বন্ধনের বৈশিষ্ট্য, গঠন এবং উদাহরণগুলি পরীক্ষা করব। এই জ্ঞানের সাহায্যে, আপনি রাসায়নিক বন্ধনের বিস্তৃত জগৎকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন, যা আপনাকে পদার্থের আচরণের পূর্বাভাস এবং ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা প্রদান করবে।
রাসায়নিক বন্ধনের প্রধান শ্রেণীবিভাগ
রাসায়নিক বন্ধন হলো পরমাণুগুলির মধ্যে অবস্থিত বল যা তাদেরকে একত্রিত করে অণু এবং স্ফটিকের মতো রাসায়নিক যৌগ গঠন করে। রাসায়নিক বন্ধন তিনটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়: আয়নিক বন্ধন, সহযোজক বন্ধন এবং ধাতব বন্ধন।
আয়নিক বন্ধন ঘটে যখন একটি পরমাণু এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে এবং অন্য একটি পরমাণু সেই ইলেকট্রন গ্রহণ করে। এই প্রক্রিয়ায় দুটি আয়ন তৈরি হয়, একটি ধনাত্মক আয়ন এবং একটি ঋণাত্মক আয়ন। এই আয়নগুলি তাদের বিপরীত চার্জ দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং একটি আয়নিক বন্ধন গঠন করে।
সহযোজক বন্ধন ঘটে যখন দুটি পরমাণু তাদের ইলেকট্রন শেয়ার করে। এই ইলেকট্রনগুলি পরমাণুর নিউক্লিয়াস দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং দুটি পরমাণুর মধ্যে একটি বন্ধন তৈরি করে। সহযোজক বন্ধন সাধারণত অধাতব পরমাণুর মধ্যে ঘটে।
ধাতব বন্ধন ঘটে যখন ধাতুর পরমাণুগুলি তাদের ভ্যালেন্স ইলেকট্রনগুলিকে একটি সাধারণ ইলেকট্রন পুলে স্থানান্তর করে। এই ইলেকট্রন পুল ধাতুর ধনাত্মক চার্জের আয়নগুলিকে একসাথে রাখে। ধাতব বন্ধন ধাতুর শক্তি, নমনীয়তা এবং তাপ এবং বিদ্যুৎ পরিবাহিত করার ক্ষমতা ব্যাখ্যা করে।
আয়নিক বন্ধন
হল এক ধরনের রাসায়নিক বন্ধন, যা প্রধানত ধাতু ও অধাতুর মধ্যে গঠিত হয়। এই বন্ধনে, ধাতু একটি বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে, যা অধাতু গ্রহণ করে। ফলে, ধাতু ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় এবং অধাতু ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়। এই বিপরীত চার্জিত আয়নগুলি পরস্পর আকর্ষণ করে গঠন করে।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলি সাধারণত খুব শক্তিশালী এবং আয়নিক যৌগগুলি সাধারণত কঠিন, ভঙ্গুর এবং উচ্চ গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক থাকে। এছাড়াও, আয়নিক যৌগগুলি সাধারণত জলে দ্রবণীয়। উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), যা সাধারণ লবণ, একটি আয়নিক যৌগ যা সোডিয়াম আয়ন (Na+) এবং ক্লোরাইড আয়ন (Cl-) এর একটি দ্বারা গঠিত।
সমযোজী বন্ধন
পরমাণুগুলো যখন আরেকটি পরমাণুর সঙ্গে বন্ধন গঠন করে তখন তাদের মধ্যে ইলেকট্রন ভাগাভাগি করে এই তৈরি হয়। এই ে পরমাণুগুলো তাদের শেষ কক্ষপথের অপূর্ণ ইলেকট্রন দান করে বা গ্রহণ করে। এইভাবে পরমাণুগুলো তাদের শেষ ভর্তি কক্ষপথ পেয়ে স্থিতিশীল অবস্থা অর্জন করে। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন অণুতে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু একটি ইলেকট্রন ভাগাভাগি করে একটি তৈরি করে। এই বন্ধনটি দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুকে একত্রে ধরে রাখে। সাধারণত অধাতব পরমাণুগুলোর মধ্যে তৈরি হয়।
ধাতব বন্ধন
ধাতুর পরমাণুগুলোতে বহিঃকক্ষে সাধারণত ১ থেকে ৩টি ইলেকট্রন থাকে । এরা দুর্বলভাবে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের সাথে যুক্ত । তাই এদের বলা হয় মুক্ত ইলেকট্রন । ধাতুর পরমাণুগুলো মুক্ত ইলেকট্রনকে পরিত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় । উক্ত ধনাত্মক আয়নগুলো নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বলের কারণে স্থির অবস্থায় থাকে । আর এই মুক্ত ইলেকট্রনগুলো স্থির অবস্থার ধনাত্মক আয়নগুলোর চারপাশে সজীবভাবে গতিশীল থাকে । এর ফলে ধাতুতে ধনাত্মক আয়নগুলো এবং মুক্ত ইলেক্ট্রনগুলোর মধ্যে এক বিশেষ ধরনের বন্ধন সৃষ্টি হয় । একেই বলে ।
হাইড্রোজেন বন্ধন
হলো এক ধরনের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ যা হাইড্রোজেনের একটি সহযোজী বন্ধন এবং অক্সিজেন, নাইট্রোজেন বা ফ্লোরিনের মতো একটি অতিব্যঞ্জক পরমাণুর মধ্যে গঠিত হয়। ের প্রাথমিক শর্ত হলো একটি ইলেক্ট্রনেগেটিভ পরমাণুর সাথে হাইড্রোজেনের একটি সহযোজী বন্ধন থাকা। এই তিনটি পরমাণুই অত্যন্ত ইলেক্ট্রনেগেটিভ এবং হাইড্রোজেনের সঙ্গে একটি বন্ধন তৈরি করে। এই বন্ধনটি অসমमित হওয়ায় আংশিক ধনাত্মক ধর্মী হাইড্রোজেন পরমাণু এবং আংশিক ঋণাত্মক ধর্মী অতিব্যঞ্জক পরমাণু সৃষ্টি করে। এই আংশিক ধনাত্মক হাইড্রোজেন পরমাণু আরেকটি অতিব্যঞ্জক পরমাণুর একাকী ইলেক্ট্রন জোড়ার সাথে আকর্ষিত হয়ে গঠন করে।
ভ্যান ডের ওয়ালস বল
হল সেই আন্তঃআণবিক বল, যা অধ্রুবীয় অণুগুলিকে আকর্ষণ করে। এই বলগুলি হল দুর্বল এবং শুধুমাত্র কাছাকাছি অণুগুলির মধ্যে কাজ করে। তিন ধরনের হয়:
- অস্থায়ী দ্বিমেরু-দ্বিমেরু বল: অধ্রুবীয় অণুগুলির মধ্যে অস্থায়ী দ্বিমেরু তৈরি হতে পারে যখন তাদের ইলেকট্রন ক্লাউড অনিয়মিতভাবে বিতরণ করা হয়। এই অস্থায়ী দ্বিমেরুগুলি একে অপরকে আকর্ষণ করে, যার ফলে অস্থায়ী দ্বিমেরু-দ্বিমেরু বল তৈরি হয়।
- শক্তিশালী দ্বিমেরু-দ্বিমেরু বল: মেরুযুক্ত অণুগুলির মধ্যে শক্তিশালী দ্বিমেরু-দ্বিমেরু বল কাজ করে। এই বলগুলি একই দিকে নির্দেশিত দ্বিমেরু মুখগুলির মধ্যে আকর্ষণ দ্বারা এবং বিপরীত দিকে নির্দেশিত দ্বিমেরু মুখগুলির মধ্যে প্রতিকর্ষণ দ্বারা সৃষ্টি হয়।
- অপশব্দ বল: অপশব্দ বলগুলি অণুগুলির মধ্যে বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির কারণে সৃষ্টি হয়। যখন অণুগুলি একে অপরকে ঘিরে থাকে, তখন তাদের ইলেকট্রন ক্লাউডগুলি একত্রে অপশব্দী হতে পারে, যার ফলে বল তৈরি হয় যাকে অপশব্দ বল বলা হয়।