মৌলের পরমাণুতে কণার রহস্য: ইলেকট্রন ও প্রোটনের মোট সংখ্যা কত?
আমার এই লেখাটিতে, আমরা পরমাণুর গঠন, ইলেকট্রন ও প্রোটনের বিন্যাস এবং একটি মৌলের পরমাণুতে তাদের সংখ্যা গণনা করার বিষয়ে আলোকপাত করব। এছাড়াও, বিদ্যুতের ভারসাম্য এবং পরমাণুগুলিকে তাদের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধকরণ সম্পর্কে জানব। আমি বিশ্বাস করি যে এই আলোচনা আপনাকে পরমাণুর দুনিয়া এবং তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ধারণা দেবে, যা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে। তাই, চলুন এই অল্প পরমাণুর বিশাল বিশ্বের মধ্যে গভীরভাবে ডুব দিই।
পরমাণুর গঠন: ইলেকট্রন ও প্রোটন
একটি মৌলের পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন-এর মোট সংখ্যা 22 হলে, তখন আমি জানি যে সেই মৌলটি সোডিয়াম। তবে, এটি কীভাবে নির্ধারণ করলাম তা ব্যাখ্যা করার আগে, পরমাণুর গঠন সম্পর্কে কিছু মৌলিক বিষয় জানা গুরুত্বপূর্ণ।
পরমাণু হলো পদার্থের মৌলিক গঠনমূলক একক। এটি এতোটাই ক্ষুদ্র যে, এর আকার সাধারণত ন্যানোমিটারের (nm) একটি বিলিয়ন ভাগের এক ভাগের সমান। পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস থাকে, যা নিউক্লিয়ন নামক কণা দ্বারা গঠিত। এই নিউক্লিয়ন দুই প্রকারের হয়: প্রোটন এবং নিউট্রন। প্রোটন ধনাত্মকভাবে চার্জযুক্ত, এবং নিউট্রন নিরপেক্ষ। নিউক্লিয়াসের চারপাশে একটি ইলেকট্রন মেঘ বিদ্যমান থাকে, যা ক্ষুদ্র, ঋণাত্মকভাবে চার্জযুক্ত কণা দ্বারা গঠিত। এই ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াসের চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে।
মৌলের পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন নির্ণয়
একটি নিরপেক্ষ পরমাণুর ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যা সমান৷ এটি জানতে আমাদের অবশ্যই পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা এবং ভর সংখ্যা জানতে হবে।
ধরুন, একটি পরমাণুর ভর সংখ্যা 22৷ ভর সংখ্যা হল পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটন এবং নিউট্রনের মোট সংখ্যা৷ যেহেতু প্রোটন এবং নিউট্রন উভয়ই নিউক্লিয়াসে থাকে, তাই আমরা প্রোটন এবং নিউট্রনের মোট সংখ্যা জানতে ভর সংখ্যা ব্যবহার করতে পারি৷
এবার, আমাদের অবশ্যই পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যাটি জানতে হবে৷ পারমাণবিক সংখ্যা নির্দিষ্ট একটি মৌলের জন্য প্রোটনের সংখ্যা নির্দেশ করে৷ আমরা পারমাণবিক সংখ্যা ব্যবহার করে প্রোটনের সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারি৷
মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যাটি এর মৌলিক পরিচয় নির্ধারণ করে৷ প্রত্যেকটি মৌলের একটি অনন্য পারমাণবিক সংখ্যা থাকে, যা এটিকে অন্য সমস্ত মৌল থেকে পৃথক করে৷
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি পরমাণুর ভর সংখ্যা 22 হয় এবং পারমাণবিক সংখ্যা 10 হয়, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে পরমাণুটির 10টি প্রোটন এবং 12টি নিউট্রন রয়েছে৷ এটি নিরপেক্ষ কারণ ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যা সমান।
একটি মৌলের পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন-এর মোট সংখ্যা গণনা
একটি মৌলের পরমাণুতে প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা নির্ণয় করতে হলে, আপনাকে তার পরমাণু সংখ্যা ও ভর সংখ্যা জানতে হবে৷ পরমাণু সংখ্যা নিয়মিত পর্যায় সারনীতে মৌলটির প্রতীকের নীচে দেয়া থাকে আর ভর সংখ্যা প্রতিটি মৌলের প্রতীকের উপরে লেখা থাকে৷
উদাহরণ হিসেবে কার্বনের পরমাণুটি বিবেচনা করি৷ পর্যায় সারনীর ৬ষ্ঠ সারিতে ৪র্থ গ্রুপে এর অবস্থান আর এর পরমাণু সংখ্যা ৬, আর ভর সংখ্যা ১২।
এখন, কার্বন পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা নির্ণয় করতে, আপনার পরমাণু সংখ্যা জানতে হবে, যা এ ক্ষেত্রে ৬৷ কারণ পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সংখ্যা সবসময় পরমাণু সংখ্যার সমান৷ তাই কার্বন পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা হবে ৬৷
এখন, ইলেকট্রনের সংখ্যা নির্ণয় করতে আপনাকে ভর সংখ্যা থেকে প্রোটন সংখ্যা বাদ দিতে হবে৷ কারণ একটি নিরপেক্ষ পরমাণুর প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা সবসময় সমান৷ তাই কার্বন পরমাণুর ইলেকট্রন সংখ্যা হবে:
ইলেকট্রন সংখ্যা = ভর সংখ্যা – প্রোটন সংখ্যা
বা, ইলেকট্রন সংখ্যা = ১২ – ৬
সুতরাং, ইলেকট্রন সংখ্যা = ৬
তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে একটি কার্বন পরমাণুতে প্রোটন ও ইলেকট্রনের সংখ্যা উভয়ই ৬৷
পরমাণুতে বিদ্যুতের ভারসাম্য
আমরা যখন একটি মূলের পরমাণু পর্যবেক্ষণ করি, আমরা আবিষ্কার করি যে এতে ইলেকট্রন এবং প্রোটনের মোট সংখ্যা 22। এই পরমাণুতে ইলেকট্রন এবং প্রোটনের ভারসাম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ইলেকট্রনগুলি ঋণাত্মকভাবে চার্জযুক্ত কণা এবং প্রোটনগুলি ধনাত্মকভাবে চার্জযুক্ত কণা। একটি পরমাণুতে ইলেকট্রন এবং প্রোটনের সংখ্যা সমান হলে পরমাণুটি নিরপেক্ষ হয়। অর্থাৎ, পরমাণুর মোট চার্জ শূন্য।
যখন একটি পরমাণুতে ইলেকট্রন এবং প্রোটনের সংখ্যা ভারসাম্যহীন হয়, তখন পরমাণুটি আয়ন হয়ে যায়। একটি আয়ন হল একটি পরমাণু যার ইলেকট্রন এবং প্রোটনের মোট সংখ্যা সমান নয়। যদি পরমাণুটিতে ইলেকট্রনগুলির সংখ্যা বেশি হয়, তবে পরমাণুটি ঋণাত্মকভাবে চার্জযুক্ত আয়ন হয়ে যায়। যদি পরমাণুটিতে প্রোটনের সংখ্যা বেশি হয়, তবে পরমাণুটি ধনাত্মকভাবে চার্জযুক্ত আয়ন হয়ে যায়।
একটি পরমাণুতে ইলেকট্রন এবং প্রোটনের ভারসাম্য রাসায়নিক বন্ধন তৈরি করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসায়নিক বন্ধন হল দুটি বা ততোধিক পরমাণুর মধ্যে একটি চুক্তিবদ্ধ আকর্ষণ যা একটি যৌগ গঠন করে। পরমাণুগুলি তাদের বাইরের শক্তির স্তরে ইলেকট্রনগুলি ভাগ করে নিয়ে বা স্থানান্তর করে রাসায়নিক বন্ধন তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াটি পরমাণুগুলির মধ্যে একটি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে এবং একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে।
পরমাণুর প্রকারভেদ: নিরপেক্ষতা ও আয়ন
একটি মৌলের পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন-এর মোট সংখ্যা হল 22। পরমাণুটি নিরপেক্ষ হলে, এর ইলেকট্রন ও প্রোটন সংখ্যা সমান হবে। এই ক্ষেত্রে, ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যা হবে 11।
যদি পরমাণুটি একটি আয়ন হয়, তাহলে এর ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন হবে। একটি পজেটিভ আয়নে প্রোটনের সংখ্যা ইলেকট্রন সংখ্যা থেকে বেশি হবে, যখন একটি নেগেটিভ আয়নে প্রোটনের সংখ্যা ইলেকট্রন সংখ্যা থেকে কম হবে।
এই ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট আয়নটি কোন ধরনের আয়ন তা জানা নেই। তাই, ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা যাবে না। তবে, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে এই আয়নে 11টি প্রোটন থাকবে।