এনগেজমেন্ট চুক্তি কি স্বামীর অধিকার চাওয়ার সমার্থক?

বিবাহের ক্ষেত্রে এনগেজমেন্টের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এটি একটি দম্পতির জন্য তাদের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলা এবং বিবাহের জন্য প্রস্তুত হওয়ার একটি উপায়। বিবাহের আগে এবং পরে, এনগেজমেন্ট বিভিন্ন অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে আসে। আমি এই ব্লগ পোস্টে, এনগেজমেন্টের এই বিষয়গুলি আলোচনা করবো এবং বিবাহ পূর্ব এবং পরবর্তী এনগেজমেন্টের মধ্যে পার্থক্য, এনগেজমেন্টের মাধ্যমে অর্জিত স্বামীর উপর অধিকার, এনগেজমেন্ট ও বিবাহের আইনি মর্যাদা, ধর্মীয় গ্রন্থে এনগেজমেন্টের স্বীকৃতি এবং এনগেজমেন্ট ভঙ্গ করার আইনি দিক সম্পর্কে উদাহরণ সহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। আশা করি এই পোস্টটি আপনার এনগেজমেন্ট সম্পর্কিত প্রশ্নগুলির উত্তর দেবে এবং বিবাহের জন্য আপনার প্রস্তুতি নেওয়ার পথ সহজ করবে।

বিবাহের পরে এনগেজমেন্টের অধিকারের দাবী করা হয় কেন?

মূলত বিবাহের পরেও অনেক নারী তাদের স্বামীদের কাছে এনগেজমেন্টের অধিকার দাবি করেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে হলে আমাদের বুঝতে হবে এনগেজমেন্টের উদ্দেশ্য কি। এনগেজমেন্ট হল দুটি পরিবারের মধ্যে একটি চুক্তি, যেখানে তারা তাদের সন্তানদের বিবাহের প্রতিশ্রুতি দেয়। এটা বিবাহের আগে একে অপরকে আরও ভালোভাবে জানার এবং বিবাহের জন্য প্রস্তুত হওয়ার একটি সময়।

বিবাহের পরে, এনগেজমেন্টের সময়কাল শেষ হয়ে যায় এবং দম্পতি বিবাহিত হয়। এখন তারা একটি আইনত বাধ্যতামূলক চুক্তিতে আবদ্ধ, যা তাদের একে অপরের প্রতি কিছু অধিকার এবং দায়িত্ব দেয়। এই অধিকার এবং দায়িত্ব বিবাহের অন্তর্গত এবং এনগেজমেন্টের সময়কালে প্রযোজ্য নয়।

তাই, বিবাহের পরে এনগেজমেন্টের অধিকার দাবি করা অযৌক্তিক। দম্পতিরা এখন বিবাহিত এবং এনগেজমেন্টের সময়কাল শেষ হয়ে গেছে।

বিবাহ পূর্ব এবং পরবর্তী এনগেজমেন্টের পার্থক্য

এনগেজমেন্টের দুটি পর্যায় রয়েছে- বিবাহপূর্ব এবং বিবাহপরবর্তী। বিবাহপূর্ব এনগেজমেন্ট হল এক ধরনের প্রতিশ্রুতি, যেখানে দুজন ব্যক্তি একে অপরকে বিয়ে করার ব্যাপারে সম্মত হন। তবে এই সময়ে সাধারণত তারা আইনতভাবে বিবাহিত হন না। অন্যদিকে, বিবাহপরবর্তী এনগেজমেন্টের ক্ষেত্রে, দুজন ব্যক্তি আইনতভাবে বিবাহিত হন এবং তাদের সম্পর্কটি সরকারী স্বীকৃতি পায়।

এই দুটি ধরনের এনগেজমেন্টের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল আইনগত স্বীকৃতি। বিবাহপূর্ব এনগেজমেন্ট আইনত স্বীকৃত নয়, তাই এটি ভেঙে ফেলা সহজ। অন্যদিকে, বিবাহপরবর্তী এনগেজমেন্ট আইনত স্বীকৃত, তাই এটি ভেঙে ফেলা কঠিন। এছাড়াও, বিবাহপূর্ব এনগেজমেন্টের ক্ষেত্রে, দুজন ব্যক্তির কোনো আইনগত দায়িত্ব বা অধিকার থাকে না। তবে বিবাহপরবর্তী এনগেজমেন্টের ক্ষেত্রে, দুজন ব্যক্তির কিছু আইনগত দায়িত্ব এবং অধিকার থাকে, যেমন- স্বামী-স্ত্রীর সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত অধিকার।

একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, বিবাহপরবর্তী এনগেজমেন্টের ক্ষেত্রে, স্বামী বা স্ত্রী কোনও অধিকার চাইতে পারেন না। উভয়েরই সমান অধিকার এবং দায়িত্ব রয়েছে।

এনগেজমেন্টের মাধ্যমে স্বামীর উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা যায় কি?

এনগেজমেন্টের মাধ্যমে স্বামীর উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করাটা একটি ভুল ধারণা। এটি একটি অস্বাস্থ্যকর এবং অবাস্তব প্রত্যাশা যা দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এনগেজমেন্ট হল দুজন মানুষের মধ্যে একটি চুক্তি, যা বিয়েতে পরিণতি ঘটাতে হবে বা নাও পারে। এই চুক্তির অর্থ এই নয় যে একজন সঙ্গী অন্যজনের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। দাম্পত্য সম্পর্ক হল দুইজন সমান অংশীদারের মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব, যেখানে উভয়েরই সমান অধিকার এবং দায়িত্ব রয়েছে। এনগেজমেন্টের মাধ্যমে স্বামীর উপর অধিকার চাওয়া একটি ভুল ধারণা, যা দাম্পত্য সম্পর্ককে তিক্ত করে তুলতে পারে। স্বাস্থ্যকর দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পারস্পরিক সম্মান, যোগাযোগ এবং বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করা উচিত, এনগেজমেন্টের মাধ্যমে জোরপূর্বক অধিকার প্রতিষ্ঠার নয়।

এনগেজমেন্ট ও বিবাহের আইনি মর্যাদা

একতা ও অন্তরঙ্গতার দিক থেকে ভারতীয় সংস্কৃতিতে এনগেজমেন্ট বা ম্যাংগনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এটি বিবাহের পূর্ববর্তী ধাপ এবং উভয় পক্ষের পরিবারের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও, আইনত এনগেজমেন্টের কোনো আলাদা মর্যাদা নেই, যা অনেককে এই প্রশ্ন তোলে যে, এনগেজমেন্ট করলে কি স্বামীর অধিকার চাওয়া যায়?

উত্তর হলো না। এনগেজমেন্ট শুধুমাত্র একটি সামাজিক প্রথা যা বিবাহের প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দেয়। এটি আইনত আপনাকে স্বামী বা স্ত্রী বানায় না। তাই, এনগেজমেন্ট করলেও আপনার স্বামীর অধিকার চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিবাহের আগ পর্যন্ত উভয়ই সিঙ্গেল এবং নিজের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রাখে।

তবে, এটি লক্ষণীয় যে, কিছু ক্ষেত্রে এনগেজমেন্ট ভাঙার কারণে মানহানির জন্য মামলা করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ এনগেজমেন্ট করার পরে কোনো কারণ ছাড়াই তা ভেঙে দেয়, তাহলে অপর পক্ষ মানহানির জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে, এটি অত্যন্ত বিরল ক্ষেত্র এবং সাধারণত মামলা হয় না।

সুতরাং, যদি আপনি এনগেজমেন্ট করার কথা ভাবছেন, তাহলে মনে রাখবেন এটি শুধুমাত্র একটি সামাজিক প্রথা এবং এর কোনো আইনি মর্যাদা নেই। এনগেজমেন্ট করলে আপনার স্বামীর অধিকার চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং আপনি বিবাহের আগ পর্যন্ত সিঙ্গেলই থাকবেন।

ধর্মীয় গ্রন্থে এনগেজমেন্টের স্বীকৃতি

এটি একটি জটিল প্রশ্ন যার উত্তর নির্ভর করে আপনার বিশ্বাস এবং আপনি যে ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসরণ করেন তার উপর। কিছু ধর্মীয় গ্রন্থে বলা হয়েছে যে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে তার প্রতি সম্মান এবং আনুগত্যের স্বীকৃতি দিতে পারেন, অন্যরা বলে যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের উপর কোনও কর্তৃত্ব দাবি করতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত, এটি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত যা আপনি এবং আপনার স্ত্রী মিলে নেবেন।

যদি আপনি আপনার ধর্মীয় গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে এনগেজমেন্টের স্বীকৃতি চাইতে চান, তাহলে আপনার স্ত্রীর সাথে এটি নিয়ে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। তার ইচ্ছা এবং চাহিদাগুলি সম্পর্কে জানুন এবং আপনারা যা চান তা নিশ্চিত করার জন্য একসাথে একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। আপনার ধর্মীয় গ্রন্থটি আপনার সম্পর্ককে গভীর করার এবং একে আরও সুন্দর করার একটি উপায় হিসাবে ব্যবহার করুন।

যাইহোক, আপনার যদি এনগেজমেন্টের স্বীকৃতি চাওয়ার বিষয়ে কোনও সংশয় থাকে তবে এটিকে জোর করা উচিত নয়। বিবাহ হল সঙ্গীদ্বয়ের মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব, এবং আপনি এবং আপনার স্ত্রীর যা চান তা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আপনার ধর্মীয় গ্রন্থটি আপনার সম্পর্ককে গভীর করার এবং একে আরও সুন্দর করার একটি উপায় হিসাবে ব্যবহার করুন।

এনগেজমেন্ট ভঙ্গ করার আইনি দিক

একটি এনগেজমেন্ট হল দুইজন মানুষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি যা তাদের ভবিষ্যতে বিবাহ করার ইচ্ছার অভিব্যক্তি দেয়। বাংলাদেশের আইন অনুসারে, একটি এনগেজমেন্ট চুক্তি হ’ল একটি আইনত বৈধ চুক্তি এবং উভয় পক্ষের একে অপরের প্রতি বাধ্যবাধকতা থাকে। যদি কোনও পক্ষ এনগেজমেন্ট ভঙ্গ করে, তবে আদালত ক্ষতিপূরণ বা অন্যান্য প্রতিকারের জন্য আদেশ দিতে পারে।

এনগেজমেন্ট ভঙ্গের ক্ষেত্রে, ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারে এবং আদালত মামলার ঘটনাগুলির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। যদি আদালত এনগেজমেন্ট ভঙ্গের ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত করে, তবে আদালত ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, মানসিক যন্ত্রণার জন্য ক্ষতিপূরণ বা অন্যান্য প্রতিকারের জন্য আদেশ দিতে পারে। এনগেজমেন্ট ভঙ্গের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করার সময় আদালত বিভিন্ন কারণ বিবেচনা করে, যেমন এনগেজমেন্টের দৈর্ঘ্য, সম্পর্কের প্রকৃতি এবং এনগেজমেন্ট ভঙ্গের কারণ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *