পিত্তথলির পাথর অস্ত্রোপচার ছাড়াই অপসারণের সহজ উপায়
আমি গত দশ বছর ধরে পাথরের সমস্যায় ভুগছি। আমি অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি এবং অনেক চিকিৎসাও করেছি। কিন্তু কোনও কিছুই স্থায়ীভাবে সারেনি। সম্প্রতি, আমি একটি নতুন চিকিৎসা সম্পর্কে শুনেছি যা পাথরের সমস্যা দূর করতে পারে। এই চিকিৎসার নাম “ড্রাগ দ্রবীভূতকরণ থেরাপি”। আমি এই চিকিৎসা সম্পর্কে আরও জানতে এবং এটি আমার ক্ষেত্রে কাজ করবে কিনা তা দেখতে আগ্রহী।
এই ব্লগ পোস্টে, আমি ড্রাগ দ্রবীভূতকরণ থেরাপি, ইন্ট্রাকর্পোরিয়াল লিথোট্রিপসি, অর্সোডক্সিক অ্যাসিড, এবং জীবনযাপনের পরিবর্তন সহ পাথরের সমস্যার জন্য উপলব্ধ বিভিন্ন চিকিৎসা বিকল্পগুলি সম্পর্কে আলোচনা করব। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করব এবং পাথরের সমস্যা নিয়ে লড়াই করছেন এমন অন্যদের জন্য কিছু টিপস দেব।
পরিচয়
পিত্তথলির পাথর একটি সাধারণ সমস্যা, যেটি পেটে তীব্র ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার কারণ হতে পারে। সাধারণত, পিত্তথলির পাথর অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচার ছাড়াই পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিগুলি আক্রমণাত্মক নয় এবং অল্প সময়েই করা যেতে পারে। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা অস্ত্রোপচার ছাড়া পিত্তথলির পাথর অপসারণের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব।
ড্রাগ দ্রবীভূতকরণ থেরাপি
হল ওষুধ ব্যবহার করে পিত্তথলির পাথর দ্রবীভূত করার একটি অস্ত্রোপচার-মুক্ত পদ্ধতি। এটি কেবলমাত্র কোলেস্টেরলের পাথরের জন্য উপযোগী কারণ পিগমেন্ট পাথর দ্রবীভূত করা যায় না। এই থেরাপির ক্ষেত্রে, মুখে নেওয়া ওষুধগুলি পিত্ত তৈরি করতে সাহায্য করে, যা পাথরগুলিকে দ্রবীভূত করে। থেরাপির সময়কাল সাধারনত 6 থেকে 24 মাসের মধ্যে হয় এবং সফলতা সাধারনত 50 থেকে 70%। কিছু ক্ষেত্রে, এটি পাথরને পুরোপুরি দ্রবীভূত করতে পারে, তবে অন্য ক্ষেত্রে এটিগুলি ছোট টুকরোতে ভাঙ্গতে পারে যা পরবর্তীতে সার্জারি ছাড়াই অপসারণ করা যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে, পিত্তথলির পাথর অপসারণের একটি কার্যকর এবং অস্ত্রোপচার-মুক্ত উপায় হতে পারে, যদিও এটি শুধুমাত্র কোলেস্টেরলের পাথরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ইন্ট্রাকর্পোরিয়াল লিথোট্রিপসি
হল অস্ত্রোপচার ছাড়াই পিত্তথলির পাথর অপসারণের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে, আপনার ডাক্তার আপনার ত্বকের মধ্য দিয়ে আপনার পিত্তথলি পর্যন্ত একটি দূরবীন প্রবেশ করাবেন। তারপর তিনি লিথোট্রিপ্টর নামে একটি ডিভাইস ব্যবহার করে পাথরগুলো ভেঙে ফেলবেন। ভাঙা পাথরগুলো তারপর আপনার শরীরের প্রাকৃতিক পথে বেরিয়ে যায়।
সাধারণত একটি আউটপেশেন্ট প্রক্রিয়া, যার অর্থ হল আপনি একই দিনে বাড়ি যেতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে সাধারণত সাধারণ অ্যানেশেসিয়া ব্যবহার করা হয়, তাই আপনি প্রক্রিয়া চলাকালীন ঘুমিয়ে থাকবেন। সাধারণত একটি সফল পদ্ধতি, এবং এটি বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। তবে, কিছু সম্ভাব্য জটিলতা আছে, যেমন রক্তপাত, সংক্রমণ এবং পিত্তনালীর ক্ষতি।
আপনার যদি পিত্তথলির পাথর থাকে, তবে আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে সম্পর্কে কথা বলতে পারেন। এই পদ্ধতিটি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করার জন্য তারা আপনার চিকিৎসা ইতিহাস এবং শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করবেন।
অর্সোডক্সিক অ্যাসিড
অস্ত্রোপচার ছাড়াই পিত্তথলির পাথর অপসারণের একটি প্রধান ওষুধ। এটি পিত্তরসে দ্রবীভূত হয়ে পিত্তথলির পাথরকে ধীরে ধীরে গলিয়ে ফেলে। এটি কেবলমাত্র কোলেস্টেরল পাথরের ক্ষেত্রে কার্যকর, পিগমেন্ট পাথরের ক্ষেত্রে নয়। সাধারণত ৬-১২ মাসের জন্য দৈনিক দুইবার খেতে হয়। এই সময়ের মধ্যে পাথর গলে যাওয়ার পরীক্ষা করার জন্য নিয়মিত আল্ট্রাসাউন্ড করতে হবে। পাথর গলে যাওয়ার পরও ওষুধ আরও ৩ মাস অব্যাহত রাখা উচিত যাতে পাথর আবার তৈরি না হয়। ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কমই দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা এবং চুলকানি হতে পারে।
জীবনযাপনের পরিবর্তন
অস্ত্রোপচার ছাড়া অস্ত্রোপচারের বিকল্প পদ্ধতিতে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিগুলোতে রোগীর দেহে কোনো কাটাছেঁড়া বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। তবে এই পদ্ধতিগুলো কেবল কিছু নির্দিষ্ট ধরনের পিত্তথলির পাথরের ক্ষেত্রে কার্যকর। এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে:
- ওরাল ডিসল্যুশন থেরাপি: এই পদ্ধতিতে রোগীকে নীল এসিড নামক একটি ওষুধ খেতে দেওয়া হয়। এই ওষুধ পিত্তথলিতে থাকা কোলেস্টেরলের পাথরকে দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিতে সাফল্যের হার প্রায় 50%।
- এক্সট্রাকর্পোরিয়াল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি (ESWL): এই পদ্ধতিতে পিত্তথলির পাথরগুলোকে ভেঙে ফেলার জন্য শক ওয়েভ ব্যবহার করা হয়। এই শক ওয়েভগুলো একটি মেশিন থেকে উৎপন্ন হয় এবং পাথরগুলোর দিকে লক্ষ্য করা হয়। ভাঙা পাথরগুলো পরে রোগীর প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে সাফল্যের হার প্রায় 70%।
- পেরকিউটেনিয়াস ট্রান্সহেপাটিক কলেসিস্টোলিথোট্রিপসি (PTCL): এই পদ্ধতিতে রোগীর লিভারের মধ্যে দিয়ে একটি ছোট্ট কাটা তৈরি করা হয়। এই কাটার মাধ্যমে একটি বিশেষ ধরনের স্কোপ পিত্তথলির মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। স্কোপটির সাহায্যে পাথরগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়। ভাঙা পাথরগুলো পরে একটি টিউবের মাধ্যমে বের করে নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে সাফল্যের হার প্রায় 90%।
উপসংহার
পিত্তথলির পাথরের উপস্থিতি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি হতে পারে। তবে চিন্তা করবেন না, অস্ত্রোপচার ছাড়াই পিত্তথলির পাথর অপসারণের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলি কম আক্রমণাত্মক, কম যন্ত্রণাদায়ক এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার সময়ের অনুমতি দেয়। আপনার জন্য কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা নির্ধারণ করতে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন। অস্ত্রোপচার ছাড়াই পিত্তথলির পাথর অপসারণের পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে আরও জানার মাধ্যমে, আপনি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক পছন্দ করতে সক্ষম হবেন। সুতরাং, দেরি করবেন না – আজই আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং বেদনামুক্ত, সুস্থ জীবনের পথ শুরু করুন।