ধাতু ও অধাতুর সহজ পার্থক্য জানুন
আমাদের চারপাশের পদার্থবস্তুকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, সেগুলি হলো ধাতু এবং অধাতু। এই দুই শ্রেণীর পদার্থের মধ্যে পার্থক্য তাদের গঠন, বৈশিষ্ট্য এবং প্রতিক্রিয়াশীলতার উপর নির্ভর করে। এই নিবন্ধে, আমি ধাতু এবং অধাতুর মধ্যে পার্থক্যগুলি আলোচনা করব এবং পরীক্ষাগার এবং প্রকৃতিতে তাদের শনাক্ত করার উপায়গুলিও ব্যাখ্যা করব।
ধাতুর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সেগুলিকে অন্য পদার্থ থেকে আলাদা করে। তার মধ্যে অন্যতম হলো তাদের উচ্চ বৈদ্যুতিক এবং তাপীয় পরিবাহিতা। এর অর্থ হলো ধাতু তড়িৎ এবং তাপকে দ্রুত এবং সহজেই সঞ্চার করতে পারে। এগুলি সাধারণত দৃঢ়, সাদাটে রঙের এবং উজ্জ্বল পৃষ্ঠের হয়। ধাতুর অপেক্ষাকৃত উচ্চ গলনাঙ্ক এবং স্ফুটনাঙ্ক থাকে, যার অর্থ সেগুলি তাপ দিলে গলানো বা বাষ্পীভবন হতে বেশি সময় নেয়।
ধাতু এবং অধাতুর পার্থক্য
ধাতু এবং অধাতু হচ্ছে দুটি প্রধান বিভাগ যাতে রাসায়নিক মৌলগুলোকে ভাগ করা হয়। এদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে এদের এভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
আমি তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য বলব যা তোমাকে ধাতু এবং অধাতু চিনতে সাহায্য করবে:
- দেখতে: সাধারণত ধাতুগুলো চকচকে এবং ধূসর রঙের হয়, যখন অধাতু গুলো বিভিন্ন রঙের হয়।
- স্পর্শ করতে: ধাতুগুলো সাধারণত শক্ত এবং ঘন হয়, অন্যদিকে অধাতুগুলো নরম এবং ভঙ্গুর হয়।
- তাপ এবং বিদ্যুৎ পরিবহন: ধাতুগুলো ভালো তাপ এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী, অপরদিকে অধাতুগুলো সাধারণত খারাপ পরিবাহী।
- প্রতিক্রিয়াশীলতা: ধাতুগুলো বেশ প্রতিক্রিয়াশীল হয়, অর্থাৎ এগুলো সহজেই অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সাথে প্রতিক্রিয়া করে। অন্যদিকে, অধাতুগুলো তুলনামূলকভাবে কম প্রতিক্রিয়াশীল।
- বৈদ্যুতিক আধান: ধাতুগুলো সাধারণত ইলেকট্রন দান করতে পারে, অর্থাৎ এগুলো ধনাত্মক আয়ন গঠন করে। অপরদিকে, অধাতুগুলো সাধারণত ইলেকট্রন গ্রহণ করে, অর্থাৎ এগুলো ঋণাত্মক আয়ন গঠন করে।
এই পার্থক্যগুলো জানা তোমাকে রসায়নে ধাতু এবং অধাতুকে চিনতে সাহায্য করবে।
ধাতুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
ধাতু হলো একটি রাসায়নিক উপাদান যা নিম্নলিখিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়:
তেজ
ধাতুগুলি তেজস্কর, যার অর্থ তারা আলো প্রতিফলিত করে এবং একটি চকচকে পৃষ্ঠ তৈরি করে। তাদের এই চকচকে রূপের জন্য ধাতুগুলি প্রায়শই অলঙ্কার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
দৃঢ়তা
ধাতুগুলি শক্ত এবং সহজে ভাঙে না বা বাঁকে না। এই দৃঢ়তার কারণে ধাতুগুলি বিভিন্ন কাঠামো এবং যন্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
লম্বনীয়তা
ধাতুগুলি লম্বনীয়, অর্থাৎ তাদেরকে পাতলা শীট বা তারের মধ্যে আঁকা বা মোড়ানো যায়। এই লম্বনীয়তার কারণে ধাতুগুলি বিভিন্ন কার্যাবলীতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন বৈদ্যুতিক তার, প্যাকেজিং এবং ছাদ।
তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা
ধাতুগুলি তাপ এবং বিদ্যুতের ভাল পরিবাহী। এই বৈশিষ্ট্যগুলি ধাতুকে তাপ স্থানান্তর এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত উপকারী করে তোলে।
প্রতিক্রিয়াশীলতা
ধাতুগুলি প্রায়শই অন্যান্য উপাদানগুলির সাথে প্রতিক্রিয়া করে যৌগ তৈরি করে। এই প্রতিক্রিয়াশীলতার কারণে ধাতুগুলি বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।
এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি ধাতুকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত উপাদান হিসাবে তৈরি করেছে। তাদের দৃঢ়তা এবং লম্বনীয়তার কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের কাঠামো এবং যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারি। তাদের তাপ এবং বিদ্যুৎ পরিবাহিতার কারণে আমরা তাপ স্থানান্তর এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি উভয় ক্ষেত্রেই ধাতুগুলি ব্যবহার করতে পারি। তাদের প্রতিক্রিয়াশীলতার কারণে আমরা বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ধাতুগুলি ব্যবহার করতে পারি।
অধাতুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
আমরা ইতিমধ্যেই শিখেছি যে, ধাতুগুলো প্রকৃতিতে পদার্থের বিশেষ শ্রেণি যাদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অধাতু হল সেইসব পদার্থ যাদের ধাতব বৈশিষ্ট্যের অভাব রয়েছে। এই অধাতুগুলোর কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সেগুলোকে ধাতু থেকে আলাদা করে তোলে।
প্রথমত, অধাতু সাধারণত ঘনত্বে হালকা হয়। যদিও কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যেমন আয়োডিন, তবে অধাতুগুলির ঘনত্ব সাধারণত ধাতুগুলির চেয়ে কম। দ্বিতীয়ত, অধাতু তাপ এবং বিদ্যুৎ এর খারাপ পরিবাহী। এই কারণেই অধাতুগুলি তাপ এবং বিদ্যুৎ এর অন্তরক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তৃতীয়ত, অধাতু সাধারণত কক্ষ তাপমাত্রায় গ্যাস, তরল বা কঠিন হিসাবে পাওয়া যায়। কেবল একটি অধাতু, ব্রোমিন, কক্ষ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। চতুর্থত, অধাতু সাধারণত ধাতুগুলির তুলনায় বেশি বিক্রিয়াশীল হয়। এগুলি অক্সিজেন, হাইড্রোজেন এবং অন্যান্য অধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে যৌগ তৈরি করে। পঞ্চমত, অধাতু সাধারণত ধাতুগুলির চেয়ে কম দৃঢ় এবং নমনীয়।
পরীক্ষাগারে ধাতু এবং অধাতু শনাক্ত করার উপায়
ধাতু এবং অধাতুর মধ্যে পার্থক্য করা একটি মৌলিক কাজ যা তুমি সহজেই পরীক্ষাগারে করতে পারো। এই প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে তুমি এই দুটি উপাদানের মধ্যে পার্থক্য করতে পারো:
প্রথমে, তুমি পদার্থের চেহারা পরীক্ষা করে দেখতে পারো। সাধারণত ধাতুগুলি উজ্জ্বল, চকচকে এবং তাদের নিজস্ব রঙ থাকে। অপরদিকে, অধাতুগুলি সাধারণত ম্লান, স্বচ্ছ বা বর্ণহীন হয়।
এরপরে, পদার্থের তাপ এবং বিদ্যুৎ পরিবাহিতার পরীক্ষা করো। ধাতুগুলি তাপ এবং বিদ্যুৎ উভয়ই ভালভাবে পরিবাহিত করে, যা তাদের উত্তম তড়িৎ পরিবাহী করে তোলে। অন্যদিকে, অধাতু সাধারণত তাপ এবং বিদ্যুতের দুর্বল পরিবাহী। তুমি একটি ব্যাটারি, বাল্ব এবং তার ব্যবহার করে এই পরীক্ষাটি করতে পারো। যদি বাল্ব জ্বলে, তবে পদার্থটি একটি ধাতু। যদি না জ্বলে, তবে এটি একটি অধাতু।
পদার্থের নমনীয়তাও পার্থক্য করার একটি ভাল উপায়। ধাতুগুলি সাধারণত নমনীয় এবং তাদের আকার পরিবর্তন করা যেতে পারে, যখন অধাতু সাধারণত ভঙ্গুর এবং সহজেই ভেঙে যায়।
অবশেষে, তুমি রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যবহার করে পদার্থের চিহ্নিতকরণ করতে পারো। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করলে ধাতুগুলি হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে, যা একটি পপ শব্দ এবং বুদবুদ তৈরি করে। অধাতুগুলি সাধারণত অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে না।
প্রকৃতিতে ধাতু এবং অধাতুর উদাহরণ
প্রকৃতিতে আমাদের চারপাশেই বিভিন্ন ধাতু ও অধাতু রয়েছে। আমরা এগুলোর বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে এগুলোকে সহজেই চিনতে পারি। যেমন-
- ধাতু সাধারণত কঠিন, দৃঢ় এবং ভারী হয়।
- অধাতু সাধারণত নরম, ভঙ্গুর এবং হালকা হয়।
- ধাতু বিদ্যুৎ ও তাপের সুপরিবাহী।
- অধাতু বিদ্যুৎ ও তাপের দুর্বল পরিবাহী।
- ধাতু সাধারণত চকচকে।
- অধাতু সাধারণত নিস্তেজ।
- ধাতু তড়িৎ বহন করতে পারে।
- অধাতু তড়িৎ বহন করতে পারে না।
এছাড়াও, ধাতুগুলোকে অক্সিজেনের সাথে যুক্ত করে ধাতব অক্সাইড তৈরি করা যায়। অন্যদিকে, অধাতুগুলোকে অক্সিজেনের সাথে যুক্ত করে অধাতব অক্সাইড তৈরি করা যায়। ধাতব অক্সাইড সাধারণত ক্ষারকীয় হয়, অপরদিকে অধাতব অক্সাইড সাধারণত অম্লীয় হয়।