দুটি ত্রিভুজ কখন সদৃশ হবে? – সহজ ও সাবলীল ব্যাখ্যা
আমরা সকলেই জানি ত্রিভুজ একটি বহুভুজ যার তিনটি বাহু ও তিনটি কোণ থাকে। ত্রিভুজের দু’টি ভাগ রয়েছে, একটি হলো সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ এবং অপরটি হলো বিষমবাহু ত্রিভুজ। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ হলো এমন ত্রিভুজ যার দু’টি বাহু সমান এবং বিষমবাহু ত্রিভুজ হলো এমন ত্রিভুজ যার তিনটি বাহুই অসমান হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, দু’টি ত্রিভুজ এমন হতে পারে যেগুলি আকারে এবং আকৃতিতে সমান হয় তবে তাদের বাহুর দৈর্ঘ্য ভিন্ন হতে পারে। এই ধরনের ত্রিভুজকে সদৃশ ত্রিভুজ বলা হয়। এই আর্টিকেলে, আমি সদৃশ ত্রিভুজের বিষয়ে আলোচনা করব। আমরা কিভাবে বুঝব যে দুটি ত্রিভুজ সদৃশ ত্রিভুজ, তাদের সংজ্ঞা, শর্তাবলী, বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
দুটি ত্রিভুজ কখন সদৃশ ত্রিভুজ হবে?
দুটি ত্রিভুজ তখনই সদৃশ ত্রিভুজ হবে যখন তাদের তিনটি কোণের মাপ সমান হয়। তবে, কেবল কোণের মাপ সমান হলেই হবে না, তাদের অন্তত দুটি বাহুর অনুপাতও সমান হতে হবে। যদি দুটি ত্রিভুজের তিনটি কোণ এবং দুটি বাহুর অনুপাত সমান হয়, তবে সেই ত্রিভুজগুলি সদৃশ হবে।
একটি সহজ উপায়ে এটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য, কল্পনা করুন আপনি একটি ত্রিভুজ আঁকছেন। এখন, সেই ত্রিভুজটির একটি অনুলিপি 만 তৈরি করুন, তবে এটি আকারের দিক থেকে কিছুটা বড় বা ছোট করে। এই নতুন ত্রিভুজটির কোণগুলিও আসল ত্রিভুজের সাথে একই হবে, তবে এর বাহুর দৈর্ঘ্য আলাদা হতে পারে। এই দুটি ত্রিভুজ সদৃশ ত্রিভুজ, কারণ তাদের তিনটি কোণ এবং দুটি বাহুর অনুপাত সমান।
সদৃশ ত্রিভুজের সংজ্ঞা
ত্রিভুজ দুটি যদি নিম্নলিখিত শর্তগুলিকে পূরণ করে তাহলেই তাদেরকে সদৃশ ত্রিভুজ বলা হয়:
- তাদের অভ্যন্তরীণ কোণগুলি যুগপত সমান হয়।
- তাদের দুটি বাহুর অনুপাত সমান হয়।
- তাদের সংশ্লিষ্ট বাহুগুলির অনুপাতও সমান হয়।
অন্য কথায়, যদি দুটি ত্রিভুজের আকৃতি এবং আকার একই রকম হয়, তাহলে তাদেরকে সদৃশ ত্রিভুজ বলা হয়। সদৃশ ত্রিভুজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল যে তাদের ক্ষেত্রফলের অনুপাত তাদের সংশ্লিষ্ট বাহুগুলির বর্গের অনুপাতের সমান।
দুটি ত্রিভুজ সদৃশ হওয়ার শর্তাবলী
ত্রিভুজ দুটি যদি নিম্নলিখিত শর্তাবলী পূরণ করে তবে এগুলো সদৃশ হবে:
- কোনো দুই কোণের সমানতা: যদি দুটি ত্রিভুজের দুইটি কোণ যথাক্রমে সমান হয়, তবে ত্রিভুজ দুটি সদৃশ হবে।
- একটি কোণ ও একটি বাহুর সমানতা: যদি দুটি ত্রিভুজে একটি কোণ এবং একটি বাহু সমান হয়, তবে ত্রিভুজ দুটি সদৃশ হবে।
- দুটি বাহুর অনুপাত ও এদের অন্তর্ভুক্ত কোণের সমানতা: যদি দুটি ত্রিভুজের দুটি বাহুর অনুপাত একই হয় এবং এদের অন্তর্ভুক্ত কোণও সমান হয়, তবে ত্রিভুজ দুটি সদৃশ হবে।
- দুটি বাহুর অনুপাত ও এদের বিপরীত কোণের সমানতা: যদি দুটি ত্রিভুজের দুটি বাহুর অনুপাত একই হয় এবং এদের বিপরীত কোণও সমান হয়, তবে ত্রিভুজ দুটি সদৃশ হবে।
- তিন বাহুর অনুপাতের সমানতা: যদি দুটি ত্রিভুজের তিনটি বাহুর অনুপাত একই হয়, তবে ত্রিভুজ দুটি সদৃশ হবে।
সদৃশ ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য
দুটি ত্রিভুজ যখন সমান আকৃতির হয় তখন সেগুলোকে সদৃশ ত্রিভুজ বলা হয়। সদৃশ ত্রিভুজের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা তাদেরকে অন্য ত্রিভুজ থেকে আলাদা করে।
প্রথমত, সদৃশ ত্রিভুজের অন্তর্বর্তী কোণগুলি সমান হয়। দ্বিতীয়ত, সদৃশ ত্রিভুজের বাহুর অনুপাত সমান হয়। এর মানে হল যে, দুটি সদৃশ ত্রিভুজের যে কোনো দুটি সংশ্লিষ্ট বাহুর অনুপাত একই হয়। এই অনুপাতকে তাদের সাদৃশ্য অনুপাত বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক ABC এবং DEF দুটি ত্রিভুজ সদৃশ এবং AB/DE = BC/EF = CA/DF হয়। এখানে, AB/DE হল তাদের সাদৃশ্য অনুপাত।
তৃতীয়ত, সদৃশ ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের অনুপাত তাদের সাদৃশ্য অনুপাতের বর্গের সমান হয়। অর্থাৎ, ত্রিভুজ ABC এবং DEF সদৃশ হলে, তাদের ক্ষেত্রফলের অনুপাত (क्षेत्र ABC/क्षेत्र DEF) = (AB/DE)2 হয়।
এই বৈশিষ্ট্যগুলি সদৃশ ত্রিভুজের অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগে সাহায্য করে। যেমন, সদৃশ ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এবং পরিধি খুঁজে বের করা, ত্রিভুজের দূরত্ব পরিমাপ করা ইত্যাদি।
সদৃশ ত্রিভুজের ব্যবহারিক প্রয়োগ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক। স্থাপত্য থেকে শুরু করে কাপড় ডিজাইনিং পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সদৃশ ত্রিভুজের সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে।
যেমন, কোনো ভবনের উচ্চতা পরিমাপ করার সময় সদৃশ ত্রিভুজের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হয়। ভবনের ছায়ার দৈর্ঘ্য এবং নিজের ছায়ার দৈর্ঘ্য মাপা হয়। তারপর এই তথ্য গুলো এবং জ্যামিতিক সূত্র ব্যবহার করে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা যায়।
এছাড়াও, ক্যামেরার লেন্স ডিজাইন করার সময় সদৃশ ত্রিভুজের জ্ঞান কাজে লাগানো হয়। ক্যামেরার লেন্সে ব্যবহৃত ট্রায়াঙ্গুলার প্রিজমগুলো আলোকরশ্মিগুলোকে ভেঙে এবং ফোকাস করে ছবি তুলতে সাহায্য করে।
এমনকি, জ্যোতিষশাস্ত্রেও সদৃশ ত্রিভুজের ব্যবহার দেখা যায়। জ্যোতিষীরা পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহের অবস্থান নির্ধারণ করতে সদৃশ ত্রিভুজের সাহায্য নেয়। তাঁরা ত্রিভুজের কোণ এবং দৈর্ঘ্য মেপে গ্রহগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেন।
অতএব, আমাদের জীবনে ব্যাপক। এই জ্ঞান আমাদেরকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে এবং আমাদের আশেপাশের জগতকে বুঝতে সাহায্য করে।