তাপ ধারণ ক্ষমতা আর আপেক্ষিক তাপের মধ্যে গোপন সম্পর্ক
আমরা প্রায়শই শুনে থাকি যে, কিছু পদার্থ তাপকে অন্য পদার্থের তুলনায় আরও ভালভাবে ধরে রাখে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি যে, পানি সোনার চেয়ে তাপকে আরও ভালভাবে ধরে রাখে। এই ঘটনাটির বর্ণনা দেওয়ার জন্য আমরা দুটি পরিভাষা ব্যবহার করি: তাপ ধারণ ক্ষমতা এবং আপেক্ষিক তাপ। এই ব্লগ পোস্টে আমরা এই দুটি পরিভাষা সম্পর্কে আলোচনা করব এবং দেখব যে তারা কীভাবে সম্পর্কিত। আমরা তাপ ধারণ ক্ষমতা এবং আপেক্ষিক তাপ পরিমাপ করার পদ্ধতি এবং কিছু সাধারণ পদার্থের তাপ ধারণ ক্ষমতা এবং আপেক্ষিক তাপের মান সম্পর্কেও জানব।
তাপ ধারণ ক্ষমতা এবং আপেক্ষিক তাপ এর সূত্র কি?
তাপ ধারণ ক্ষমতা একটি পদার্থের তাপ শোষণ এবং নিজের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করার ক্ষমতাকে বোঝায়। এটিকে সাধারণত ‘সি’ দিয়ে প্রকাশ করা হয় এবং এর একক হলো জুল প্রতি কিলোগ্রাম প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস (J/kg°C)। অন্যদিকে, আপেক্ষিক তাপ হলো একটি পদার্থের নির্দিষ্ট তাপ ধারণ ক্ষমতাকে একই ভরের পানির তাপ ধারণ ক্ষমতার সাথে তুলনা করার একটি মাত্রাহীন রাশি। এটিকে ‘S’ দিয়ে প্রকাশ করা হয় এবং এর একক হলো সি (কেবল একটি সংখ্যা, একক নয়)।
এই দুটি রাশির মধ্যে সম্পর্কটি নিম্নরূপ:
S = C / Cw
যেখানে,
১) S হলো পদার্থের আপেক্ষিক তাপ
২) C হলো পদার্থের তাপ ধারণ ক্ষমতা
৩) Cw হলো পানির তাপ ধারণ ক্ষমতা (1 ক্যালোরি/গ্রাম°C বা 4.184 জুল/গ্রাম°C)
এই সম্পর্কটি থেকে দেখা যাচ্ছে যে একটি পদার্থের আপেক্ষিক তাপ তার তাপ ধারণ ক্ষমতার সমানুপাতিক। যদি একটি পদার্থের তাপ ধারণ ক্ষমতা বেশি হয়, তাহলে তার আপেক্ষিক তাপও বেশি হবে। অন্যদিকে, যদি একটি পদার্থের তাপ ধারণ ক্ষমতা কম হয়, তাহলে তার আপেক্ষিক তাপও কম হবে।
তাপ ধারণ ক্ষমতা কীভাবে পরিমাপ করা হয়?
তাপ ধারণ ক্ষমতা পরিমাপের জন্য, একটি নির্দিষ্ট ভরের পদার্থকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম করা হয় এবং তারপর তাকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঠান্ডা করা হয়। পদার্থকে গরম এবং ঠান্ডা করার জন্য প্রয়োজনীয় তাপের পরিমাণ পরিমাপ করা হয় এবং পদার্থের ভর এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন দ্বারা ভাগ করে তাপ ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়।
এর ধারণ ক্ষমতা পদার্থের ধরন, তাপমাত্রা এবং চাপের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে তাপ ধারণ ক্ষমতাও বাড়ে। তবে, কিছু পদার্থের ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়, যেমন জল। জলের তাপ ধারণ ক্ষমতা 4 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ হয় এবং তারপর তাপমাত্রা বাড়লে বা কমলে তা কমে যায়। এছাড়াও, তাপ ধারণ ক্ষমতা চাপের সঙ্গেও পরিবর্তিত হতে পারে।
আপেক্ষিক তাপ কীভাবে পরিমাপ করা হয়?
আপেক্ষিক তাপ একটি পদার্থের তাপ ধারণ ক্ষমতার পরিমাপ। এটি সংজ্ঞায়িত করা হয় নিম্নরূপ: “একটি পদার্থের আপেক্ষিক তাপ হল একটি ইউনিট ভরের পদার্থের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১ কেলভিন বাড়াতে প্রয়োজনীয় তাপের পরিমাণ।”
তাপ পরিমাপ করার প্রচলিত পদ্ধতিটি মিশ্রণ পদ্ধতি নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে, একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জানা ভরের একটি পদার্থকে জানা ভরের একটি অন্য পদার্থের সঙ্গে মিশ্রিত করা হয়। মিশ্রণের শেষ তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় এবং আপেক্ষিক তাপ নিম্নলিখিত সমীকরণ দ্বারা নির্ধারণ করা হয়:
c = (m₁ * c₁ * (T₁ - T)) / (m₂ * (T - T₂))
যেখানে:
- c হল অজানা পদার্থের আপেক্ষিক তাপ
- m₁ হল অজানা পদার্থের ভর
- c₁ হল জানা পদার্থের আপেক্ষিক তাপ
- m₂ হল জানা পদার্থের ভর
- T₁ হল জানা পদার্থের প্রাথমিক তাপমাত্রা
- T₂ হল অজানা পদার্থের প্রাথমিক তাপমাত্রা
- T হল মিশ্রণের শেষ তাপমাত্রা
তাপ ধারণ ক্ষমতা এবং আপেক্ষিক তাপ এর মধ্যে সম্পর্ক
তাপ ধারণ ক্ষমতা এবং আপেক্ষিক তাপ এ দুটি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ধারণা যা পদার্থের তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে তার আচরণকে বর্ণনা করে। আপেক্ষিক তাপ হল তাপের পরিমাণ যা একক ভরের পদার্থের তাপমাত্রাকে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কেলভিন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, তাপ ধারণ ক্ষমতা হল একটি নির্দিষ্ট ভরের পদার্থকে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কেলভিন তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় তাপের পরিমাণ।
এই দুটি ধারণার মধ্যে একটি সরল সম্পর্ক রয়েছে: আপেক্ষিক তাপ হল তাপ ধারণ ক্ষমতার ব্যাস্তানুপাতিক। অর্থাৎ, যদি পদার্থের তাপ ধারণ ক্ষমতা বেশি হয়, তবে তার আপেক্ষিক তাপ কম হবে। এবং যদি পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বেশি হয়, তবে তার তাপ ধারণ ক্ষমতা কম হবে।
এই সম্পর্কটি দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন উপায়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য রান্না করার সময়, আমরা জানি যে পানির তুলনায় তেলের তাপ ধারণ ক্ষমতা বেশি। এর অর্থ হল খাবার রান্না করতে পানির চেয়ে তেল ব্যবহার করলে খাবার তাড়াতাড়ি রান্না হবে। একইভাবে, আমরা জানি যে ইটের তুলনায় কাঠের আপেক্ষিক তাপ বেশি। এর অর্থ হল শীতের দিনে একটি কাঠের ঘর একটি ইটের ঘরের চেয়ে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হবে।
যেসব উপকরণের তাপ ধারণ ক্ষমতা বেশি তাদের আপেক্ষিক তাপ কম কেন?
তাপ ধারণ ক্ষমতা হল কোনও পদার্থের তাপ পরিমাপ করার ক্ষমতা। আপেক্ষিক তাপ হল কোনও পদার্থের একক ভরকে 1 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় তাপের পরিমাণ। অর্থাৎ, তাপ ধারণ ক্ষমতা হল কোনও পদার্থের মোট তাপ পরিমাপ, আর আপেক্ষিক তাপ হল প্রতি ইউনিট ভরের তাপ পরিমাপ। তাই, যদি কোনও পদার্থের তাপ ধারণ ক্ষমতা বেশি হয়, তবে তার আপেক্ষিক তাপ কম হবে। কারণ, বেশি তাপ ধারণ ক্ষমতা নিয়ে একটি পদার্থকে তুলনামূলকভাবে কম তাপ প্রয়োগ করেই তাপমাত্রা বাড়ানো যায়। উদাহরণস্বরূপ, পানির তাপ ধারণ ক্ষমতা বেশি, আর তার আপেক্ষিক তাপ কম। এর অর্থ হল, পানিকে তুলনামূলকভাবে কম তাপ প্রয়োগ করেই তাপমাত্রা বাড়ানো যায়।
যেসব উপকরণের আপেক্ষিক তাপ বেশি তাদের তাপ ধারণ ক্ষমতা কম কেন?
আমাদের রোজকার জীবনে আমরা তাপ এবং তাপমাত্রার পার্থক্য লক্ষ্য করি। যেকোনো পদার্থের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে তাপ বলা হয়। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হারকে আপেক্ষিক তাপ বলা হয়।
আমরা জানি, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে উপাদানের ভেতরের কণার গতিবেগ বেড়ে যায়। ফলে উপাদানের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে, তাপমাত্রা হ্রাসের সাথে সাথে উপাদানের ভেতরের কণার গতিবেগ কমে যায়। ফলে উপাদানের তাপমাত্রাও হ্রাস পায়।
এবার আমরা আপেক্ষিক তাপের দিকে নজর দিই। আপেক্ষিক তাপ হল যে পরিমাণ তাপ একটি পদার্থের এক কিলোগ্রাম ভরের তাপমাত্রাকে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয়।
উপকরণের আপেক্ষিক তাপ বেশি হলে সেই উপকরণের তাপ ধারণ ক্ষমতা কম হয়। কারণ, আপেক্ষিক তাপ বেশি হলে পদার্থের ভেতরের কণার গতিবেগ বেশি হয়। ফলে পদার্থের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া সহজ হয়। তাই, আপেক্ষিক তাপ বেশি হলে সেই উপকরণের তাপ ধারণ ক্ষমতা কম হয়।