তাজমহলের অজানা রহস্যসমূহ: ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া গল্প
আমি তাজমহল নিয়ে লিখছি, একটি সাদা মার্বেল সমাধিক্ষেত্র যা মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মরণে তৈরি করেছিলেন। এটি ভারতের আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপত্য অলংকরণগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়।
এই ব্লগ পোস্টে, আমি তাজমহল সম্পর্কে কিছু মজাদার তথ্যগুলি ভাগ করে নেব, যেমন এর নির্মাণের পিছনের ইতিহাস, এর অনন্য স্থাপত্য শৈলী এবং এর নির্মাণে জড়িত কারিগরদের সম্পর্কে। আমি তাজমহলের কিছু রহস্যও আলোচনা করব, যেমন এর কালো মার্বেল কক্ষ এবং কেন্দ্রীয় সমাধির নিচে গোপন রুমের কাহিনী।
তাজমহল সম্পর্কে মজার তথ্য
তাজমহল সম্পর্কে আমি কিছু মজার তথ্য জানি না সবাই জানে না, যেমন:
১। তাজমহলকে আসলে একটি সমাধিস্থল হিসাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, এবং প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি মসজিদ নয়।
২। তাজমহলের গম্বুজটির নিজস্ব ছায়া নেই, কারণ এটি একটি নিখুঁত আটকোণী আকারে ডিজাইন করা হয়েছে যা সূর্যের আলোকে সব দিক থেকে প্রতিফলিত করে।
৩। তাজমহলের সাদা মার্বেলটি রাজস্থানের মকরানা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল, যা এটিকে সবচেয়ে সাদা এবং উজ্জ্বল মার্বেলগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।
৪। তাজমহলের নির্মাণে প্রায় ২২,০০০ শ্রমিক এবং ১,০০০ হস্তী জড়িত ছিল।
৫। তাজমহলের চারটি মিনার আসলে কিছুটা বাঁকা করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে যদি কোন মিনার ভেঙে যায় তবে তা মূল ভবনের দিকে না পড়ে।
৬। তাজমহলের ভিতরে সম্রাট শাহজাহান এবং তার স্ত্রী মমতাজ মহল উভয়েরই সমাধি রয়েছে।
৭। তাজমহল একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত, এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে স্বীকৃত এবং বিখ্যাত স্থাপত্যগুলির মধ্যে একটি।
তাজমহলের নির্মাণের ইতিহাস
তাজমহলের অপরূপ সৌন্দর্য যেমন বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত, তেমনিই এর নির্মাণের ইতিহাসও বেশ রোমাঞ্চকর। এই বিশাল স্থাপত্যকর্মটি মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে নির্মাণ করেছিলেন।
১৬৩১ সালে মমতাজ মহলের মৃত্যুর পর শাহজাহান এতটাই শোকাহত হয়েছিলেন যে তিনি মমতাজের স্মরণে “সমগ্র বিশ্বে যার সাথে তুলনা করা যাবে এমন” একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৬৩২ সালে তাজমহলের নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৬৫৩ সালে এটি সম্পূর্ণ হয়। নির্মাণে প্রায় দুই দশক সময় এবং প্রায় ২০,০০০ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়েছিল।
তাজমহল মرمর দ্বারা নির্মিত একটি সাদা সৌধ, যা তার দুটি সরু মিনার এবং विशाल গম্বুজের জন্য সহজেই চিনতে পারা যায়। সৌধের অভ্যন্তরে মমতাজ মহল এবং শাহজাহানের সমাধি রয়েছে, যা সূক্ষ্ম খোদাই এবং মূল্যবান পাথর দিয়ে সজ্জিত। তাজমহলের চারপাশে একটি সুদৃশ্য বাগান রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ফুলের গাছ রয়েছে।
তাজমহলের স্থাপত্য শৈলী
মোগল স্থাপত্যকলার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি মধ্য এশিয়া, পারস্য এবং ভারতীয় উপমহাদেশের স্থাপত্যের উপাদানগুলিকে একীভূত করে। সমগ্র স্থাপনাটি সাদা মার্বেল দিয়ে নির্মিত, যা সূর্যের আলোয় অবিশ্বাস্যভাবে সুন্দরভাবে দীপ্তিমান হয়।
তাজমহলের মূল ভবনটি একটি সমান্তরাল পাদদেশের উপর অবস্থিত এবং একটি বিশাল গম্বুজ দ্বারা শীর্ষস্থান করা হয়েছে। গম্বুজটি চারটি ছোট কুঠুরী দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা ভবনের প্রতিটি কোণে অবস্থিত। ভবনের প্রতিটি পাশে চারটি সরু মিনার রয়েছে, যা ভবনের উচ্চতা এবং মহিমাকে জোর দেয়।
তাজমহলের অভ্যন্তরটিও ততটাই চিত্তাকর্ষক। প্রধান চেম্বারটি একটি বৃহৎ অষ্টভুজাকৃতির কক্ষ, যা একটি বিশাল কেন্দ্রীয় কুঠুরী দ্বারা শীর্ষস্থান করা হয়েছে। কুঠুরীর দেয়ালগুলি জটিল শ্বেতপাথরের খোদাই এবং সূক্ষ্ম আঁকা কাজ দ্বারা আচ্ছাদিত। মাজারের ঠিক নীচে সম্রাট শাহজাহান এবং তার স্ত্রী মমতাজ মহলের কবর রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে এবং এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে মনোনীত হয়েছে। এটি ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ এবং বছরে মিলিয়ন মিলিয়ন পর্যটককে আকর্ষণ করে।
তাজমহলের নির্মাণে জড়িত কারিগর
তাজমহল যুগ যুগ ধরে ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপত্যকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এটি সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছিলেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে। তাজমহল নির্মাণে হাজার হাজার কারিগর কাজ করেছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন বিদেশি। কিন্তু এটি একটি বিস্ময়কর ঘটনা যে, তাদের কেউই নিজেদের নাম বা স্বাক্ষর তাজমহলের কোথাও রেখে যায়নি।
এর কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। কিছু ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন যে সম্রাট শাহজাহান সুন্দরতম সমাধিটি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন যা বিশ্ব দেখেছে এবং তিনি চাননি যে কোনো একক কারিগরের নাম তাজমহলের প্রতিভা ও সৌন্দর্যকে আড়াল করুক। অন্যরা বিশ্বাস করেন যে কারিগররা নিজেদের নাম না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কারণ তারা মনে করতেন যে তাজমহল তাদের সবার কাজ এবং তারা চাননি যে কোনো একজন ব্যক্তি তা নিজের কৃতিত্ব হিসেবে দাবি করুক।
কারণ যাই হোক না কেন, দের গুমনামিতা তাদের দক্ষতা ও শিল্পকলার প্রতি সাক্ষ্য দেয়। তারা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ভবনগুলির একটি তৈরি করেছিলেন, এটি প্রায় ৪০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং আজও লোকদের মুগ্ধ করে।
তাজমহলের বিভিন্ন রহস্যের আলোচনা
তাজমহলের বিভিন্ন রহস্যের কথা শুনেছি, কিন্তু আজ আমি এগুলোর বিশদ আলোচনা করব।
প্রথম রহস্য হল এর নির্মাণ উপায়। কিভাবে এত বড় একটি স্মৃতিস্তম্ভকে যমুনার তীরে নির্মাণ করা হল, এটি এখনও একটি আশ্চর্যের বিষয়। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে একটি বিশাল র্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছিল যা নদীর তীরে নির্মিত হয়েছিল। অন্যরা মনে করেন যে বিশাল চাকা এবং পুলির একটি জটিল ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছিল ব্লকগুলোকে জায়গায় তুলতে।
দ্বিতীয় রহস্য হল এর কালো দাগ। বছরের পর বছর ধরে, তাজমহলের সাদা মার্বেলের উপর কালো দাগ দেখা গেছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে এই দাগগুলি বায়ু দূষণের ফলে হয়েছে, অন্যরা মনে করে যে এগুলি পাখির মলের কারণে হয়েছে। তবে সঠিক কারণ এখনও অজানা।
তৃতীয় রহস্য হল এর ভূগর্ভস্থ চেম্বার। তাজমহলের নিচে অনেকগুলি ভূগর্ভস্থ চেম্বার রয়েছে, যা জনসাধারণের জন্য বন্ধ রয়েছে। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে এই চেম্বারগুলিতে ষষ্ঠ মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি রয়েছে, অন্যরা মনে করে যে এগুলিতে তাজমহলের নির্মাণকারীদের সমাধি রয়েছে।