তড়িৎ ক্ষেত্রের একক কী? – জানুন বিস্তারিত

আমাদের চারপাশের পদার্থজগতে আমরা প্রতিদিনই বিদ্যুতের উপস্থিতি দেখতে পাই। বাতি জ্বালানো, মোবাইল চার্জ দেওয়া বা একটি ছোট্ট চুম্বক দিয়ে কাগজের টুকরো তোলা- এগুলো সবই বিদ্যুতেরই প্রকাশ। এই বিদ্যুৎ আসলে কী, তা বুঝতে গেলে আমাদের আগে জানতে হবে তড়িৎ ক্ষেত্র কী।

তড়িৎ ক্ষেত্র হল স্থানের এমন একটি অঞ্চল, যেখানে একটি আধানবিশিষ্ট কণা স্থাপন করলে সেটি একটি বল অনুভব করে। এই বলটিকে তড়িৎ বল বলা হয় এবং এটি আধানবিশিষ্ট কণার আধানের মান এবং সেই অঞ্চলের তড়িৎ ক্ষেত্রের মানের গুণফলের সমান। তড়িৎ ক্ষেত্রের ধারণাটি বিদ্যুতের মৌলিক উপাদানগুলি বুঝতে এবং তাদের আচরণ ব্যাখ্যা করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই আর্টিকেলে, আমরা তড়িৎ ক্ষেত্রের সংজ্ঞা এবং ধারণা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমরা তড়িৎ ক্ষেত্রের একক সম্পর্কে জানব, যা কুলম্ব/স্কোয়ার মিটার। আমরা কুলম্বের আবিষ্কার এবং এর গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করব। এছাড়াও, আমরা তড়িৎ ক্ষেত্রের এককের ব্যাখ্যা এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে জানব। এই আর্টিকেলটি পড়ার পর, আপনি তড়িৎ ক্ষেত্রের মূল ধারণাগুলি বুঝতে পারবেন এবং বিদ্যুতের জগতকে আরও ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন।

তড়িৎ ক্ষেত্রের সংজ্ঞা ও ধারণা

তড়িৎ ক্ষেত্রের একক হল ভোল্ট প্রতি মিটার (V/m)। এটি তড়িৎ ক্ষেত্রের শক্তির পরিমাণ পরিমাপ করে। তড়িৎ ক্ষেত্রের শক্তি হল স্থির বৈদ্যুতিক আধানের ক্ষেত্রে একটি অবস্থানে প্রযুক্ত বলের পরিমাণ। তড়িৎ ক্ষেত্রের একক V/m অর্থ হল যে, প্রতি মিটার দূরত্বে, তড়িৎ ক্ষেত্রের শক্তি ভোল্টে প্রকাশিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ, 100 V/m এর তড়িৎ ক্ষেত্রের অর্থ হল যে, একটি অবস্থান থেকে 1 মিটার দূরত্বে অন্য অবস্থানে একটি আধানকে সরানো হলে, আধানটির উপর 100 ভোল্টের একটি বল প্রযুক্ত হবে। তড়িৎ ক্ষেত্রের একক V/m বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে পরিমাপ করা যেতে পারে, যেমন ফিল্ড মিল এবং গাউস মিটার।

তড়িৎ ক্ষেত্রের একক: কুলম্ব/স্কোয়ার মিটার

তড়িৎ ক্ষেত্র হল একটি স্থান যেখানে একটি তড়িৎ আধান অন্য আধানের ওপর বল প্রয়োগ করতে পারে। তড়িৎ ক্ষেত্রের একক হ’ল কুলম্ব/স্কোয়ার মিটার (C/m²)। একটি বিন্দু আধানের কারণে একটি বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্রের মান হ’ল সেই বিন্দু থেকে বিন্দু আধানের দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এবং বিন্দু আধানের মানের সমানুপাতিক। অর্থাৎ,

E = k * q / r²

যেখানে:

  • E হল তড়িৎ ক্ষেত্র (C/m²)
  • k হল কুলম্বের ধ্রুবক (8.98755 × 10^9 N⋅m²/C²)
  • q হল বিন্দু আধানের মান (C)
  • r হল বিন্দু আধান থেকে বিন্দু পর্যন্ত দূরত্ব (m)

তড়িৎ ক্ষেত্রের একক কুলম্ব/স্কোয়ার মিটারটি তড়িৎ ক্ষেত্রের মাত্রা প্রকাশ করে। কুলম্ব হল তড়িৎ আধানের একক, এবং স্কোয়ার মিটার হল ক্ষেত্রফলের একক। অতএব, কুলম্ব/স্কোয়ার মিটার একটি তড়িৎ আধান প্রতি একক ক্ষেত্রফলের তড়িৎ ক্ষেত্রের মান প্রকাশ করে।

কুলম্বের আবিষ্কার ও এর গুরুত্ব

শারীরিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কুলম্বের আবিষ্কারটি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের একক নির্ধারণের পথ প্রশস্ত করেছে। ১৭৮৫ সালে ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী চার্লস-অগাস্টিন ডি কুলম্ব বিভিন্ন তড়িত আধানযুক্ত বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল পরিমাপের জন্য একটি টর্শন ভারসাম্য ব্যবহার করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে এই বলগুলি আধানের পরিমাণের বর্গের সমানুপাতিক এবং তাদের বিচ্ছেদের দূরত্বের বর্গের বিপরীতমূলতিকভাবে সমানুপাতিক। এই পর্যবেক্ষণগুলি বৈদ্যুতিক আধানের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া বর্ণনা করে এমন কুলম্বের বিধি তৈরির দিকে পরিচালিত করে।

কুলম্বের বিধিটি বলে যে দুটি বিন্দু আধান (q1 এবং q2) দ্বারা তৈরি বিদ্যুৎ বল (F) নিম্নলিখিত সূত্র দ্বারা প্রদত্ত হয়:

F = k * q1 * q2 / r^2

যেখানে:

  • k হল কুলম্বের ধ্রুবক (8.98755 × 10^9 N⋅m^2/C^2)
  • q1 এবং q2 হল বিন্দু আধানের পরিমাণ
  • r হল বিন্দু আধানের মধ্যে দূরত্ব

কুলম্বের বিধি ভৌত বিজ্ঞানের একটি মৌলিক আইন যা বিভিন্ন তড়িত ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যেমন তড়িৎ ক্ষেত্র, বিভব, এবং ক্যাপাসিত্যান্স। এটি তড়িৎ প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎ ক্ষেত্রের এককের ব্যাখ্যা

তড়িৎ ক্ষেত্র হলো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে যে অঞ্চলটিতে একটি ধনাত্মক চার্জের প্রভাবে অন্য একটি চার্জের ওপর বল ক্রিয়া করে। তড়িৎ ক্ষেত্রের একককে নিউটন প্রতি কুলম্ব (N/C) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর অর্থ হল যে, যদি কোনো বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্রের মান 1 N/C হয়, তবে সেই বিন্দুতে একটি ধনাত্মক চার্জের ওপর 1 কুলম্ব বল ক্রিয়া করবে।

একটি তড়িৎ ক্ষেত্রের মান কয়েকটি কারণের ওপর নির্ভর করে, যার মধ্যে চার্জের মান, চার্জগুলির মধ্যে দূরত্ব এবং মাধ্যমের ধরণ অন্তর্ভুক্ত। যদি চার্জের মান বেশি হয়, তবে তড়িৎ ক্ষেত্রের মানও বেশি হবে। যদি চার্জগুলির মধ্যে দূরত্ব বেশি হয়, তবে তড়িৎ ক্ষেত্রের মান কম হবে।

এবং যদি মাধ্যমের পারমিটিভিটি কম হয়, তবে তড়িৎ ক্ষেত্রের মান বেশি হবে। তড়িৎ ক্ষেত্রের এককটি বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের জন্য ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি (SI) এর একটি অংশ। এটি আন্তর্জাতিক মাপন পদ্ধতির (BIPM) দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

তড়িৎ ক্ষেত্রের এককের প্রয়োগ

তড়িৎ ক্ষেত্রের একক হলো নিউটন প্রতি কুলম্ব (N/C)। এটি তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্যের একক, যা একটি তড়িৎ চার্জের আশেপাশে সৃষ্ট অদৃশ্য বলের ক্ষেত্রের প্রাবল্যকে পরিমাপ করে। তড়িৎ ক্ষেত্রের এককটি ব্যাখ্যা করার জন্য, অতিরিক্ত ধনাত্মক চার্জের কারণে তৈরি হওয়া তড়িৎ ক্ষেত্রের একটি সহজ উদাহরণ বিবেচনা করা যাক। এই তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য হলো চার্জের কারণে প্রতি একক ধনাত্মক পরীক্ষামূলক চার্জে প্রয়োগ করা বল। এই বলের একক হলো নিউটন (N), এবং পরীক্ষামূলক চার্জের একক হলো কুলম্ব (C)। তাই, তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্যের এককটি হয় নিউটন প্রতি কুলম্ব (N/C)। এটি তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রাবল্য পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত আদর্শ একক।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *