গ্যাসীয় মৌল কয়টি? সমস্ত গ্যাসীয় মৌলের একটি সম্পূর্ণ তালিকা
আমরা সবাই জানি যে পৃথিবীতে প্রচুর মৌল রয়েছে। কিন্তু কী আপনি জানেন যে এই সমস্ত মৌলের মধ্যে কিছু মৌল রয়েছে যা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে? হ্যাঁ, এটি সত্যি! এই মৌলগুলিকে গ্যাসীয় মৌল বলা হয়। এবং আজকের এই ব্লগ পোস্টে, আমি আপনাদেরকে গ্যাসীয় মৌল সম্পর্কে সবকিছু বলতে যাচ্ছি।
আপনি জানতে পারবেন যে কতগুলি গ্যাসীয় মৌল রয়েছে, সেগুলির বৈশিষ্ট্য কী, সেগুলি কীভাবে ব্যবহৃত হয়, সেগুলি কোথা থেকে পাওয়া যায় এবং সেগুলির সাথে কাজ করার সময় কি কি নিরাপত্তা সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়াও, আমি কিছু অতিরিক্ত তথ্য এবং তথ্যসূত্রও শেয়ার করব। তাই পড়তে থাকুন এবং গ্যাসীয় মৌল সম্পর্কে আপনার জ্ঞান সমৃদ্ধ করুন!
গ্যাসীয় মৌলের সংখ্যা
গ্যাসীয় মৌলের সংখ্যা জানার আগে প্রথমে জানতে হবে গ্যাসীয় মৌল কী? সাধারণত যে সকল মৌল সাধারণ তাপমাত্রা এবং চাপে (এসটিপি) গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে, তাদেরকে গ্যাসীয় মৌল বলা হয়। এরা পিরিয়ডিক টেবিলে প্রথম ১৮টি মৌল নিয়ে গঠিত। এদেরকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, নিষ্ক্রিয় গ্যাস এবং উদ্দীপক গ্যাস। হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপ্টন, জেনন এবং রেডন এই ছয়টি মৌল নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিসেবে পরিচিত। এরা অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং সাধারণত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না। অপরদিকে, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফ্লোরিন, ক্লোরিন এবং ব্রোমিন এই ছয়টি মৌল উদ্দীপক গ্যাস হিসেবে পরিচিত। এরা নিষ্ক্রিয় গ্যাসের চেয়ে বেশি সক্রিয় এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। তাহলে আমরা বলতে পারি, মোট ১৮টি গ্যাসীয় মৌল রয়েছে।
গ্যাসীয় মৌলের বৈশিষ্ট্য
গ্যাসীয় মৌলগুলি হল রাসায়নিক মৌল কক্ষ তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। এই মৌলগুলি হলঃ হাইড্রোজেন(H), হিলিয়াম(He), নাইট্রোজেন(N), অক্সিজেন(O), ফ্লোরিন(F), নিয়ন(Ne), ক্লোরিন(Cl), আর্গন(Ar), ক্রিপ্টন(Kr), জেনন(Xe) এবং রেডন(Rn)।
এই মৌলগুলির ইলেকট্রনিক কনফিগারেশনে সাধারণত 1-8টি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন থাকে এবং সেগুলি উচ্চ তাপমাত্রা এবং নিম্ন চাপে গ্যাসের মতো আচরণ করে। গ্যাসীয় মৌলগুলি বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকে এবং শিল্প ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
গ্যাসীয় মৌলের ব্যবহার
আমাদের জানা গ্যাসীয় মৌলগুলির বিচিত্র ব্যবহার রয়েছে। হিলিয়াম হলুদ বেলুন ভরাট করতে ব্যবহৃত হয় এবং এয়ারশিপকে ভাসতে সহায়তা করে। এটি শ্বাসযন্ত্রের ডাইভারদের জন্য এবং শৈত্যকারী হিসাবে ক্রায়োজেনিক্সেও ব্যবহৃত হয়।
অক্সিজেন জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য এবং শিল্প প্রক্রিয়াগুলিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন ইস্পাত তৈরি এবং পেট্রোরাসায়ন উৎপাদন। নাইট্রোজেন খাদ্যান্নে ব্যবহৃত হয় এবং টায়ার এবং সার তৈরির জন্যও ব্যবহৃত হয়।
হাইড্রোজেন জ্বালানীর একটি সম্ভাব্য উত্স হতে পারে এবং রকেটের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ক্লোরিন জল এবং পুলকে জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। আর্গন ইলেকট্রিক লাইট এবং লেজারে ব্যবহৃত হয়।
নেওন সাইন এবং ডিসপ্লেতে ব্যবহৃত হয়। জেনন নির্দিষ্ট শল্যচিকিৎসা প্রক্রিয়াগুলিতে এবং মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, রেডন রেডিওথেরাপিতে ব্যবহৃত হয়।
গ্যাসীয় মৌলগুলি আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, শুধু আমাদের জীবনযাপন করা সম্ভব নয় বরং আধুনিক সমাজকে এগিয়ে নিতেও সাহায্য করে।
গ্যাসীয় মৌলের প্রাপ্তি
প্রকৃতিতে গ্যাসীয় অবস্থায় পাওয়া মৌলগুলিই গ্যাসীয় মৌল। তাদের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলির উপর ভিত্তি করে, গ্যাসীয় মৌলগুলিকে তিনটি গ্রুপে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে: উদাসীন গ্যাস, অম্লজ গ্যাস এবং ক্ষারক গ্যাস।
উদাসীন গ্যাস: হিলিয়াম (He), নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপ্টন (Kr), জেনন (Xe) এবং রেডন (Rn) উদাসীন গ্যাস হিসাবে পরিচিত। এই গ্যাসগুলি সাধারণত বিক্রিয়াশীল নয় এবং এদের ইলেকট্রনিক কনফিগারেশন স্থিতিশীল।
অম্লজ গ্যাস: কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) এবং নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) অম্লজ গ্যাস হিসাবে পরিচিত। এই গ্যাসগুলি জলের সাথে বিক্রিয়া করে অম্ল তৈরি করে।
ক্ষারক গ্যাস: অ্যামোনিয়া (NH3) একমাত্র ক্ষারক গ্যাস। এটি জলের সাথে বিক্রিয়া করে একটি দুর্বল ক্ষার তৈরি করে।
গ্যাসীয় মৌলগুলি প্রকৃতিতে বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া যায়। কিছু উদাসীন গ্যাস বাতাসে পাওয়া যায়, যখন অ্যামোনিয়া জৈবিক প্রক্রিয়ার ফলে তৈরি হয়। CO2 উদ্বায়ন, জ্বলন এবং ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন হয়।
গ্যাসীয় মৌলের নিরাপত্তা সাবধানতা
গ্যাসীয় মৌলগুলি হলো সেসব মৌল যা ঘরের তাপমাত্রায় (প্রায় 25 ডিগ্রি সেলসিয়াস) গ্যাস অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। এই গ্যাসগুলি প্রায়ই অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল এবং বিপজ্জনক হতে পারে, তাই তাদের সঙ্গে কাজ করার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।
প্রথমত, সবসময় একটি ভাল ভেন্টিলেটেড এলাকায় গ্যাসীয় মৌলগুলির সঙ্গে কাজ করুন। এটি নিশ্চিত করবে যে কোনো লিক ক্ষেত্রে গ্যাসগুলি দ্রুত ছড়িয়ে যাবে এবং আপনার শ্বাস নেওয়ার জন্য সতেজ বাতাসের সরবরাহ থাকবে। দ্বিতীয়ত, সঠিক সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম পরুন, যেমন দস্তানা, চশমা এবং একটি ল্যাব কোট। এটি আপনাকে গ্যাসীয় মৌলগুলির সঙ্গে দুর্ঘটনাজনক যোগাযোগ থেকে রক্ষা করবে।
তৃতীয়ত, গ্যাসীয় মৌলগুলির সঙ্গে কাজ করার সময় সর্বদা একটি ফায়ার এক্সটিনগ্যুইশার হাতের কাছে রাখুন। যদি অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো জরুরী পরিস্থিতি দেখা দেয়, তাহলে আপনি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। চতুর্থত, গ্যাসীয় মৌলগুলি সিল করা কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন এবং আপনি যখনই তাদের সঙ্গে কাজ করবেন তখনই তাদের ব্যবহার করুন। এটি দুর্ঘটনাজনক লিক বা বিস্ফোরণের ঝুঁকি হ্রাস করবে।
গ্যাসীয় মৌলগুলির সঙ্গে কাজ করার সময় এই নিরাপত্তা সাবধানতাগুলি অনুসরণ করে, আপনি নিজেকে এবং অন্যদের কোনো সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন।
অতিরিক্ত তথ্য এবং তথ্যসূত্র
যেকোনো বিষয়ে গভীর অধ্যয়ন করতে হলে, শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই আটকে থাকলে চলবে না। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও বিভিন্ন বই, জার্নাল, নিবন্ধ, ওয়েবসাইট ইত্যাদিতে তথ্য খোঁজার নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। বইয়ের বাইরের এইসব তথ্যের সহায়তায় পাঠ্যবইয়ের বিষয়াদি আরও ভালভাবে বোঝা সম্ভব হয়। পাশাপাশি বিষয়টির আরও গভীরে যেতে সাহায্য করে। এছাড়াও, বিভিন্ন বিষয়ে হাতে-কলমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে কিনা, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো জাদুঘর, ইন্ডাস্ট্রি অথবা কোনো গবেষণাগার ভিজিটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে পাঠ্যবইয়ের বিষয়াদি বাস্তব জীবনে কীভাবে প্রয়োগ করা হয়, তা খুব সহজেই শেখা সম্ভব হয়।