ইন্টারনেটের জন্মভূমি: কোন দেশে প্রথম ইন্টারনেট চালু হয়েছিল?

ইন্টারনেট, যা আজ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে, তার জন্ম কীভাবে হয়েছিল তা জানতে চান? আজকে আমরা ইন্টারনেটের আবিষ্কারের অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং তথ্যপূর্ণ একটি যাত্রায় বেরোব। আমরা সেই দেশটি শনাক্ত করব যেখানে প্রথমবারের মত ইন্টারনেট চালু হয়েছিল এবং আমাদের পৃথিবীকে বদলে দেওয়া এই প্রযুক্তির উদ্ভবের ইতিহাস সম্পর্কে জানব।

প্যাকেট-সুইচিং নেটওয়ার্কের উদ্ভব থেকে শুরু করে ARPANET এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জন্ম পর্যন্ত, আমরা ইন্টারনেটের বিবর্তনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ অনুসরণ করব। আর শুধু তাই নয়, আমরা দেখব কীভাবে ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে এবং আমাদের জীবনকে আকৃতি দিয়েছে। তাই, আসুন আমরা ইন্টারনেটের আবিষ্কারের গল্প শুরু করি এবং শিখি এটি আমাদের আজ যেভাবে জানি সেভাবে আস্তে আস্তে কীভাবে অস্তিত্বে এসেছে।

কোন দেশে প্রথম ইন্টারনেট চালু হয়েছে?

যখন আমি প্রথম ইন্টারনেটের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে শুরু করেছিলাম, তখন আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, “” আমার গবেষণায়, আমি আবিষ্কার করেছি যে ইন্টারনেটের একটি দীর্ঘ এবং জটিল ইতিহাস রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশ এবং প্রতিষ্ঠান জড়িত।

যদিও “ইন্টারনেট” শব্দটির কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, তবে সাধারণত এটিকে বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক সংযুক্ত কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলির সিস্টেম হিসাবে বর্ণনা করা হয়। এই সংজ্ঞা অনুসারে, সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ছিল অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি নেটওয়ার্ক (ARPANET), যা 1969 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। ARPANET বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।

ইন্টারনেটের ইতিহাস

ইন্টারনেটের জন্ম হয়েছিল ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শিক্ষা গবেষণা সংস্থা DARPA (Defense Advanced Research Projects Agency) এর ARPANET থেকে। এই নেটওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক যোগাযোগকে সুরক্ষিত করা। তবে ধীরে ধীরে এই প্রকল্পটি বেড়ে ওঠে এবং বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থার সাথে যুক্ত হতে থাকে। ১৯৮২ সালে TCP/IP প্রোটোকলের বিকাশের ফলে ARPANET বদলে দাঁড়ায় আধুনিক ইন্টারনেটের ভিত্তিতে। ১৯৯০ এর দশকে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবন এবং গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের বিকাশের ফলে ইন্টারনেটের আধুনিক যুগের সূচনা হয়। আজ, ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ এবং বিনোদনের জন্য একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্যাকেট-সুইচিং নেটওয়ার্কের উদ্ভব

প্যাকেট-সুইচিং নেটওয়ার্কগুলি ডেটাকে প্যাকেট নামে পরিচিত ছোট, নির্দিষ্ট আকারের অংশে ভেঙে দেয়। প্রতিটি প্যাকেটে প্রেরক এবং গন্তব্যের ঠিকানা এবং ডেটার একটি অংশ থাকে। প্যাকেটগুলি তারপর নেটওয়ার্কে প্রেরণ করা হয়, যেখানে এগুলি রাউটার নামক ডিভাইসগুলি দ্বারা সর্বোত্তম পাথে রাউট করা হয়। যখন প্যাকেটগুলি গন্তব্যে পৌঁছায়, তখন সেগুলি পুনরায় একত্রিত করা হয় এবং আসল ডেটাতে রূপান্তরিত করা হয়।

নেটওয়ার্ক গুলি সার্কিট-সুইচিং নেটওয়ার্কগুলির চেয়ে বেশ কয়েকটি সুবিধা প্রদান করে। প্রথমত, প্যাকেট-সুইচিং নেটওয়ার্কগুলি আরও দক্ষ, কারণ তারা নেটওয়ার্কের সম্পদগুলি আরও ভালভাবে ব্যবহার করতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্যাকেট-সুইচিং নেটওয়ার্কগুলি আরও নির্ভরযোগ্য, কারণ যদি কোনো একটি প্যাকেট হারিয়ে যায়, তবে নেটওয়ার্ক কেবল হারিয়ে যাওয়া প্যাকেটটি পুনরায় প্রেরণ করতে পারে। তৃতীয়ত, প্যাকেট-সুইচিং নেটওয়ার্কগুলি আরও স্কেলেবেল, কারণ তারা সহজেই প্রয়োজন অনুসারে প্রসারিত বা সংকুচিত করা যেতে পারে।

প্যাকেট-সুইচিং নেটওয়ার্কগুলিকে প্রথম দিকে ডেটা নেটওয়ার্কগুলিতে ব্যবহার করা হত তবে এখন এগুলি ভয়েস এবং ভিডিও নেটওয়ার্কগুলিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। প্যাকেট-সুইচিং নেটওয়ার্কগুলি ইন্টারনেটের ভিত্তি এবং আজকের আধুনিক বিশ্বের অপরিহার্য অংশ।

ARPANET এবং ইন্টারনেটের জন্ম

আমি তোমাকে বলতে যাচ্ছি কীভাবে এআরপ্যানেট এবং তারপরে ইন্টারনেটের জন্ম হয়েছিল। আমরা প্রথমে এআরপ্যানেট সম্পর্কে কথা বলব যা ইন্টারনেটের পূর্বসূরি ছিল।

1958 সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি নতুন নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা শুরু করে যা “এডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি নেটওয়ার্ক” বা সংক্ষেপে এআরপ্যানেট নামে পরিচিত। এআরপ্যানেটের লক্ষ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সংযুক্ত করা।

1969 সালে, এআরপ্যানেটের চারটি নোড ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস; স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট; ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়; এবং সান্তা বারবারা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারফেস মেসেজ প্রসেসর (IMPs) -এ সংযুক্ত ছিল। এই নোডগুলি একে অপরের কাছে বার্তা পাঠাতে পারে, যা এআরপ্যানেটের জন্ম চিহ্নিত করে।

এআরপ্যানেটের আবিষ্কার ইন্টারনেটের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে। 1970 এর দশকে, ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল/ইন্টারনেট প্রোটোকল (টিসিপি/আইপি) তৈরি করা হয়েছিল, যা এআরপ্যানেট নেটওয়ার্কে বিভিন্ন কম্পিউটারগুলিকে সংযুক্ত এবং যোগাযোগ করার অনুমতি দিয়েছিল। এই প্রযুক্তিটির ফলে এআরপ্যানেটের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে এবং বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের ভিত্তি স্থাপন করে যা আমরা এখন ইন্টারনেট বলে জানি।

তবে, ইন্টারনেটের আনুষ্ঠানিক জন্ম তারিখটি এখনও বিতর্কের বিষয়। 1 জানুয়ারি, 1983, প্রায়শই ইন্টারনেটের জন্ম তারিখ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি সেই দিন যখন এআরপ্যানেট টিসিপি/আইপি নেটওয়ার্কিং প্রোটোকলগুলিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এই পরিবর্তন এআরপ্যানেটটিকে অ-এআরপ্যানেট নেটওয়ার্কগুলির সাথে সংযোগ করার অনুমতি দেয়, যা বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক তৈরির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল যা আমরা এখন ইন্টারনেট বলে জানি।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবন

১৯৮৯ সালে, ইংলিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স-লি সার্ন-তে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (ডাব্লুডাব্লুডব্লিউ) আবিষ্কার করেন। তিনি তথ্য ভাগ করে নেওয়ার একটি নতুন উপায় তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যা তিনি হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল (HTTP) তৈরি করে করেছেন। এই প্রোটোকল ডকুমেন্টকে লিঙ্ক করতে ব্যবহৃত হয়েছিল, যা ব্যবহারকারীদের ওয়েব পেজের মধ্যে সহজেই নেভিগেট করতে সক্ষম করে। বার্নার্স-লিও হাইপারটেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ (HTML) তৈরি করেছিলেন, যা ওয়েব পেজ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। প্রথম ওয়েবসাইট, info.cern.ch, 1991 সালে তৈরি করা হয়েছিল।

ইন্টারনেটের বিশ্বব্যাপী বিস্তার

যদিও আজকের দিনে, আমরা ইন্টারনেটকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখছি, তবে এর বিশ্বব্যাপী বিস্তারের একটি দীর্ঘ এবং আকর্ষণীয় ইতিহাস রয়েছে। এই অত্যাধুনিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সালে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি মেসেজিং সিস্টেম তৈরি করেছিল যা আমরা আজ ইন্টারনেট নামে জানি। এই মেসেজিং সিস্টেমটি ছিল ARPANET নামে পরিচিত, যা Advanced Research Projects Agency Network (ARPA) এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

ARPANET ইন্টারনেটের প্রাথমিক পর্যায় ছিল, এবং এটি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব নিয়ে এসেছিল। এটি গবেষকদের বিশ্বব্যাপী তাদের সহকর্মীদের সাথে সহযোগিতা করার এবং তথ্য শেয়ার করার অনুমতি দিয়েছে, যা আগে অসম্ভব ছিল। যেমন যেমন ARPANET এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে, তেমন তেমন এর প্রযুক্তিও উন্নত হয়েছে, এবং ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে, এটি ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল/ইন্টারনেট প্রোটোকল (TCP/IP) গ্রহণ করেছে, যা আজ ইন্টারনেটের মূল ভাষা।

TCP/IP এর গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল, কারণ এটি বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কগুলিকে একত্রিত করেছে এবং ইন্টারনেটের আজকের রূপ তৈরি করতে সাহায্য করেছে। ইন্টারনেটের বিস্তারের সাথে সাথে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWW) এর উদ্ভাবন একটি বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। WWW একটি সিস্টেম যা ইন্টারনেটে তথ্য সংগঠিত এবং অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেয়।

১৯৯০-এর দশকে, ইন্টারনেটের ব্যক্তিগত ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এর কারণ হিসেবে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জনপ্রিয়তা দুটোই। এই সময়কালে, ইন্টারনেট-ভিত্তিক ব্যবসা এবং পরিষেবাগুলিরও ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে, যা আজকের ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করেছে।

আজ, ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে এবং প্রায় ৫ বিলিয়ন মানুষ এটি ব্যবহার করে। এটি তথ্য, যোগাযোগ এবং বিনোদনের একটি অপরিহার্য উৎসে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেট আমাদের শিক্ষা, কাজ এবং জীবনযাপনের পদ্ধতিতে বিপ্লব এনেছে। এটি আমাদের বিশ্বকে একটি ছোট জায়গায় পরিণত করেছে, যা আমাদের বিশ্বব্যাপী সংযুক্ত হতে এবং তথ্য ও সংস্কৃতি বিনিময় করতে সক্ষম করেছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *