মোলাস্কা পর্ব: নরম দেহের অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের রহস্য উদঘাটন

আমি কি কখনও কল্পনা করেছি যে সাগরের গভীর জলে কী রহস্য লুকিয়ে আছে? অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের বিচিত্র জগৎ, বিশেষ করে মোলাস্কা পর্ব, আমাদের চোখের সামনে একটি অবিশ্বাস্য পৃথিবী উন্মোচন করে। এই প্রাণীরা তাদের নরম দেহ, অসাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং পৃথিবীর ইতিহাসে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পরিচিত।

এই নিবন্ধে, আমি মোলাস্কা পর্বের অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মনোমুগ্ধকর জগতের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেব। আমরা তাদের শ্রেণীবিভাগ, বিস্তার, বৈশিষ্ট্য এবং মানব সভ্যতায় তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব। তাদের জটিল আকৃতি থেকে শুরু করে তাদের অভিযোজ্য ক্ষমতা পর্যন্ত, মোলাস্কা পর্বের প্রাণীরা আমাদের প্রাকৃতিক জগতের অবিশ্বাস্য বৈচিত্র্য এবং অতুলনীয় সৌন্দর্যের সাক্ষ্য দেয়। তাই আসুন এই সমুদ্রের রহস্যগুলিকে একসাথে অন্বেষণ করি এবং মোলাস্কা পর্বের অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের আশ্চর্যজনক বিশ্বে ডুব দেই।

‘Mollusca’ পর্বের অমেরুদণ্ডী প্রাণী

মলাস্কা পর্বের অমেরুদণ্ডী প্রাণীরা জলজ প্রাণী, যাদের নরম দেহ একটি শেল দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। এদের প্রায় ১০০,০০০ প্রজাতি আছে, যার মধ্যে শামুক, স্লিগ, অক্টোপাস ও স্কুইড অন্তর্ভুক্ত। এই প্রাণীগুলোর একটি ম্যান্টল নামক একটি মাংসল আচ্ছাদন রয়েছে, যা শেল তৈরি করে। ম্যান্টলের একটি ফাঁক রয়েছে, যা থেকে প্রাণীটি তার মাথা, পা এবং অন্যান্য শরীরের অঙ্গগুলো বের করে।

মলাস্কা শরীরের প্রতিসাম্য দ্বিপার্শ্বীয় এবং তাদের দেহ ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং কনকিওলিন নামক একটি প্রোটিনের একটি শেল দ্বারা আবৃত থাকে। শেলটি তাদের শিকারীদের থেকে সুরক্ষা দেয় এবং জল থেকে শুকিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। মলাস্কার পা পেশীবহুল এবং এটি তাদের চলাফেরা করতে সাহায্য করে। কিছু মলাস্কার পায়ের স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো আঠালো পদচিহ্ন রয়েছে।

মলাস্কাদের মুখে একটি রাসপার জিহ্বা রয়েছে, যা খাদ্যকে কচলাতে সাহায্য করে। এদের পাচনতন্ত্র সম্পূর্ণ এবং এটি একটি মুখ, একটি গ্রাসনালি, একটি পাকস্থলী এবং একটি অন্ত্র নিয়ে গঠিত। অন্ত্রটি শরীরের পিছনে একটি মলদ্বার দিয়ে খোলে। মলাস্কার একটি রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা রয়েছে, যা রক্ত পাম্প করার জন্য একটি হৃদয় ব্যবহার করে। এদের একটি শ্বাসযন্ত্র ব্যবস্থাও রয়েছে, যা শ্বাস নিতে গিলস ব্যবহার করে।

নরম দেহের সামুদ্রিক প্রাণী

মোলাস্কা পর্বের প্রাণীদের শরীর নরম, স্নিগ্ধ, আচ্ছাদিত এবং সাধারণত শেল বা আচ্ছাদন থাকে। তাদের দেহ তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত: মাথা, পা এবং ভিসেরাল বস্তা। মাথায় সংবেদনাশী অঙ্গ রয়েছে, যেমন চোখ, শুঁড় এবং স্পর্শক। পা প্রাণীর চলাফেরার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং ভিসেরাল বস্তায় অন্ত্র, হৃদপিণ্ড এবং প্রজনন অঙ্গ রয়েছে।

মোলাস্কা পর্বের প্রাণীরা সমুদ্র, মিষ্টি পানি এবং স্থলভাগের বিভিন্ন বাসস্থানে পাওয়া যায়। তারা বিভিন্ন আকার এবং আকৃতিতে আসে, ছোট স্লাগ থেকে শুরু করে বড় আকারের অক্টোপাস পর্যন্ত।

কিছু মোলাস্কা প্রাণী, যেমন ক্লামস এবং শামুক, তাদের শক্ত শেলের মধ্যে নিজেদেরকে রক্ষা করে। অন্যরা, যেমন স্লাগ এবং নগ্ন ঘোলা, তাদের আত্মরক্ষার জন্য বিষাক্ত রাসায়নিক নিঃসরণ করে।

মোলাস্কা পর্বের প্রাণীরা ফিল্টার খাওয়ানোকারী, শিকারী বা প্যারাসাইট হিসাবে বিভিন্নভাবে খাদ্য গ্রহণ করে। তারা জলাশয়ের তলদেশে বসবাস করে, পাথর বা উদ্ভিদের সাথে সংযুক্ত থাকে বা সাঁতার কাটে। কিছু মোলাস্কা প্রাণী, যেমন স্ক্যালপস এবং ক্যালমারি, বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস। অন্যরা, যেমন ঘোলা এবং স্লাগ, উদ্যান এবং কৃষিজমিতে কীটপতঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়।

‘Mollusca’ পর্বের শ্রেণীবিভাগ

মোলাস্কা পর্বের প্রাণীগুলো একটি বিশাল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণীগোষ্ঠী, যা সামুদ্রিক, মিষ্টিপানির এবং স্থলজ পরিবেশে বসবাস করে। এই পর্বের প্রাণীদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন একটি নরম শরীর, একটি শক্ত খোল (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে), এবং একটি ম্যান্টেল।

মোলাস্কার রয়েছে পাঁচটি প্রধান শ্রেণী:

  1. গ্যাস্ট্রোপডা: এরা সবচেয়ে বড় শ্রেণী, এতে ঘোঁঘা, শামুক এবং সলিগ হিসাবে পরিচিত প্রাণী রয়েছে। তাদের দেহটি একটি একক খোল দ্বারা আবৃত, যা একটি কুণ্ডলীাকার আকৃতির হতে পারে।


  2. বাইভালভিয়া: এদের সাধারণ নাম শামুক। এদের দেহ দুটি অভিন্ন খোল দ্বারা আবৃত থাকে, যেগুলো একটি পেশী দ্বারা সংযুক্ত থাকে।


  3. সেফালোপোডা: স্কুইড, অক্টোপাস এবং ক্যাটলফিশের মতো প্রাণীরা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তাদের নরম শরীর, ভাল বিকশিত মস্তিষ্ক এবং আট বা দশটি ভুজ রয়েছে।


  4. পলিপ্লাকোফোরা: এরা সাধারণত চিটন নামে পরিচিত এবং একটি খোল দ্বারা আবৃত যেটি আটটি প্লেট দ্বারা গঠিত।


  5. স্ক্যাফোপোডা: এরা হাতির দাঁত শামুক নামে পরিচিত এবং একটি নলাকার খোল রয়েছে।


বিস্তার এবং বিভিন্নতা

মোলাস্কারা পর্বটি প্রাণীজগতের একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় পর্ব। এটিতে প্রায় ১০০,০০০ প্রজাতি রয়েছে, যা সমগ্র প্রাণীজগতের প্রায় ১২%। মোলাস্কারা বিভিন্ন পরিবেশে, যেমন সমুদ্র, মিঠা পানি এবং এমনকি স্থলভাগেও বাস করে। এগুলির আকারও ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়, কয়েক মিলিমিটারের ছোট স্লিগ থেকে কয়েক মিটারের দৈত্য স্কুইড পর্যন্ত।

মোলাস্কারাগুলির শরীরের মূল পরিকল্পনাটি অনেকটা একই রকম। এগুলির একটি নরম শরীর রয়েছে যা একটি শক্ত খোল দ্বারা আবৃত। খোলটি তাদের শিকারীদের থেকে রক্ষা করে এবং ভিতরের অঙ্গগুলির সুরক্ষাও দেয়। মোলাস্কারাদের একটি মাথা, একটি পাদ এবং একটি ম্যান্টল রয়েছে। মাথায় তাদের একটি মুখ, চোখ এবং টেনটাকল রয়েছে। পাদটি গতিশীল এবং এটির সাহায্যে তারা উঠতে, খেতে এবং সাঁতার কাটতে পারে। ম্যান্টল শরীরের বাকি অংশকে ঢেকে রাখে এবং এখানে শ্বাসনালী এবং প্রজনন অঙ্গগুলি অবস্থিত।

মোলাস্কারদের আহার অভ্যাসও ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। কিছু প্রজাতি শিকারী যা অন্যান্য প্রাণীদের শিকার করে, যেমন শামুক এবং স্কুইড। অন্যরা ঝরনা খায়, যেমন স্লিগ এবং সামুদ্রিক শামুক। আবার কিছু প্রজাতি পরজীবী যা অন্যান্য প্রাণীদের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে, যেমন টেপওয়ার্ম এবং ফ্লুক।

মোলাস্কারা পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রজাতি খাদ্য শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন শামুক এবং স্লিগ। অন্যরা পানি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, যেমন সামুদ্রিক শামুক। আবার কিছু প্রজাতি ঔষধ এবং অন্যান্য পণ্যের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন দুমড়ে এবং মুক্তো।

মোলাস্কারা পর্বটি একটি আকর্ষণীয় এবং বৈচিত্র্যময় প্রাণীদের দল। এগুলির উদ্ভট আকার এবং আহার অভ্যাস তাদের প্রাণীজগতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাণীদের মধ্যে একটি করে তুলেছে।

‘Mollusca’ পর্বের বৈশিষ্ট্য

‘মল্লুস্কা’ শব্দটি প্রাণীজগতের একটি বর্গকে নির্দেশ করে, যা ‘মলাস্কা’ নামেও পরিচিত। এই বর্গের অন্তর্ভুক্ত প্রাণীদের অনন্য শারীরবৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা তাদের অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে। তোমরা কি জানো কোন প্রাণীগুলো ‘মল্লুস্কা’ বর্গের অন্তর্ভুক্ত?

‘মল্লুস্কা’ বর্গের একটি অন্যতম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তাদের নরম দেহ, যা একটি কাঠিন্যপূর্ণ খোল দ্বারা আবৃত থাকে। এই খোলটি সাধারণত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দ্বারা গঠিত হয় এবং প্রাণীটিকে শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করে। ‘মল্লুস্কা’ বর্গের প্রাণীরা তাদের পেশীবহুল পায়ের সাহায্যে চলাফেরা করে।

তাদের মাথা খুব ছোট এবং শরীরের সামনের অংশে অবস্থিত, এবং তাদের আছে দুটি স্পর্শক শৃঙ্গ, যা খাদ্য খুঁজে পেতে এবং পরিবেশ অনুধাবন করতে ব্যবহৃত হয়।

‘মল্লুস্কা’ বর্গের প্রাণীদের আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তাদের ‘ম্যান্টেল’। এটি শরীরের একটি পাতলা আস্তরণ, যা খোলটি নিঃসরণ করে এবং শ্বাসকার্যের জন্যও দায়ী। শ্বাসকার্যের জন্য, ‘মল্লুস্কা’রা তাদের ‘ম্যান্টেল’ ক্যাভিটিতে পানি প্রবেশ করায়, যেখানে এটি অক্সিজেন শোষণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে।

‘মল্লুস্কা’ বর্গের প্রাণীরা বিশ্বের বিভিন্ন জলজ, স্থলজ এবং মিষ্টি পানির পরিবেশে বাস করে। তারা একটি বিশাল বর্গ, যা সামুদ্রিক শামুক, স্কুইড, অক্টোপাস, ঘোংঘ এবং স্লাগ সহ বিভিন্ন প্রজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের খাদ্যাভ্যাসও বিভিন্ন রকম, কিছু প্রজাতি শৈবাল এবং প্ল্যাঙ্কটন খায়, আবার অন্য কিছু প্রজাতি শিকারী হিসাবে কাজ করে।

আর্থ-সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

মোলাস্কা পর্বের প্রাণী হল মলাস্কা, যা একটি বড় এবং বৈচিত্রময় প্রাণী গোষ্ঠী, যার মধ্যে সামুদ্রিক, মিষ্টি জলের এবং স্থলজ প্রজাতি রয়েছে। এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত প্রধান শ্রেণীগুলি হল:

  • গাস্ট্রোপডা (শামুক): সর্পিল শাঁস, একক শঙ্কুর আকারের শেল এবং মাথায় দুটি অ্যান্টেনার বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে ঘোঘ, শামুক এবং সলিগ।
  • বাইভালভিয়া (দ্বিচত্বর শামুক): দুটি অভিন্ন শাঁসযুক্ত শেল, মাথা অনুপস্থিত এবং পায়ে তীক্ষ্ণ প্রান্ত থাকে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্যের জন্য ব্যবহৃত শামুক, চিংড়ি এবং ক্যালম।
  • সেফালোপডা (মাথাযুক্ত শামুক): সফট বডি, আট বা দশটি অস্ত্র এবং একটি সুস্পষ্ট মাথা বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে অক্টোপাস, স্কুইড এবং কাটলফিশ।
  • অ্যাপ্লাকোফোরা: শাঁসবিহীন, সিলিন্ডার আকারের এবং শরীরের পিছনের অংশে একটি টিউবের মতো মুখ থাকে।
  • পলিপ্লাকোফোরা: আট বা আরও শেল প্লেট দ্বারা আবৃত, চ্যাপ্টা শরীর এবং একটি প্রান্তিক পায়ে থাকে।

মোলাস্কা পর্ব বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক এবং মিষ্টি জলের বাস্তুতন্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি খাদ্য শৃঙ্খলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, খাদ্য সরবরাহ করে এবং অন্যান্য প্রাণীদের জন্য আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও, মোলাস্কা মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উত্স এবং জহরত তৈরির জন্যও ব্যবহৃত হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *