কত বয়সে কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল হয়? জানুন আজই

আমার গ্রামের বাড়ির আঙিনায় কৃষ্ণচূড়া গাছটি আমার প্রিয়। ছোটবেলা থেকেই সেই গাছটিকে আমি ফুল ফোটার আগে থেকেই খেয়াল করি। কিন্তু তখন আমার জানা ছিল না, একটি গাছের বয়স কীভাবে বলা যায় বা বয়স অনুযায়ী কীভাবে তার বদল হয়। গাছপালা নিয়ে আমার কৌতূহলের শেষ নেই। আর সেই কারণেই গত কয়েক বছর ধরে গাছপালা নিয়ে পড়াশুনা করতে শুরু করি। আমার পড়াশুনা থেকে আমি কৃষ্ণচূড়া গাছের বয়স নির্ণয়ের একটি মজার পদ্ধতি আবিষ্কার করি, যা আমি আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।

কৃষ্ণচূড়া গাছের ফুলের বর্ণনা

কৃষ্ণচূড়ার গাছ এবং ফুলের সৌন্দর্য সবাইকেই মুগ্ধ করে। কৃষ্ণচূড়ার গাছ সাধারণত ৬ থেকে ১০ মিটার উঁচু হয়। গাছের শাখা-প্রশাখা মোটামুটি ঘন এবং ছত্রাকৃতির। গাছের পাতাগুলি সরু, লম্বাটে এবং ডিম্বাকৃতির। পাতার রঙ তুষারপাতের মতো ধূসর সবুজ।

মূলত কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলি সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং অনন্য বৈশিষ্ট্য। এগুলি ছোট, লাল রঙের এবং কৃমিবর্মের মতো দেখায়। ফুলগুলি ঘন গুচ্ছে ফোটে এবং গাছটিকে একটি আগুনের লাল রঙে পরিণত করে। এটি বসন্ত এবং গ্রীষ্মের মধ্যে ফুটে এবং প্রায় ১৫ দিন স্থায়ী হয়। কৃষ্ণচূড়ার ফুল প্রজাপতি এবং মৌমাছির মতো পরাগায়নকারীদের আকর্ষণ করে। এই ফুলগুলি লোক উৎসব এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও ব্যবহৃত হয়।

কৃষ্ণচূড়ার গাছের আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এর খোসা। গাছের ছাল কালো এবং ফাটা। এটি গাছটিকে আগুন এবং পোকামাকড়ের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলি বিভিন্ন ধরনের মাটিতে জন্মাতে পারে, তবে তারা সবচেয়ে ভালোভাবে শুষ্ক, বালুকাময় মাটিতে জন্মে। তারা পূর্ণ সূর্যালোকে ফুল ফোটায়।

কৃষ্ণচূড়ার গাছ বাংলাদেশ, ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই গাছগুলিকে বাগান, পার্ক এবং রাস্তার পাশে সজ্জিত গাছ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এগুলি কাঠের জন্যও ব্যবহৃত হয় যা শক্ত এবং টেকসই।

কৃষ্ণচূড়া গাছের বয়স নির্ণয়

ের জন্য আমরা বেশ কয়েকটি ವಿষয় বিবেচনা করতে পারি। প্রথমত, গাছের আকার এবং পরিধি একটি ভাল সূচক হতে পারে। সাধারনত, বয়স্ক কৃষ্ণচূড়া গাছগুলি তরুণ গাছের চেয়ে বড় এবং চওড়া হয়। দ্বিতীয়ত, গাছের ছালও বয়স নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে। তরুণ গাছের ছাল সাধারণত মসৃণ এবং সবুজ হয়, কিন্তু বয়স্ক গাছের ছাল রুক্ষ এবং ছাই রঙের হয়ে থাকে। তৃতীয়ত, গাছের শাখাগুলির সংখ্যাও বয়স নির্দেশ করতে পারে। তরুণ গাছের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্ক গাছের সাধারণত আরও শাখা থাকে। অবশেষে, গাছের মূল সিস্টেমও বয়স নির্ধারণে একটি ভূমিকা পালন করে। তরুণ গাছের মূল সাধারণত ছোট এবং অগভীর হয়, যখন প্রাপ্তবয়স্ক গাছের মূল বড় এবং গভীর হয়। এই সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে, আমরা কৃষ্ণচূড়া গাছের বয়স সম্পর্কে একটি মোটামুটি ভাল অনুমান করতে পারি।

ফুলক্রমের ভিত্তিতে বয়স নির্ণয়

যেসব গাছে প্রতি বছর একই সময়ে ফুল ধরে, সেসব গাছের ফুল ফোটার সময়টি দিয়ে আমরা বয়স নির্ণয় করতে পারি। আমার গ্রামের বাড়িতে একটি বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। গাছটি প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে ফুল দিতে শুরু করে। গাছের ডালপালায় অসংখ্য লাল রঙের ফুল ফোটে। ফুলগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। ফুলের মিষ্টি গন্ধে চারপাশটা ম ম করে। আমরা জানি যে, ফাল্গুন মাস হলো বসন্তের মাস। তাই কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল ফোটার সময় দিয়ে বুঝা যায় যে, বসন্ত এসে গেছে।

অন্যান্য কারণসমূহ যা ফুলক্রম প্রভাবিত করে

মৃত্তিকার গুণগত মান: কৃষ্ণচূড়া গাছ মাটির গুণগত মানের प्रति সংবেদনশীল। ভালো জল নিষ্কাশন ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর, দোআঁশ মাটিতে এই গাছটি ভালভাবে জন্মে। যদি মাটি খুব বেশি ভারী বা জলাবদ্ধ হয়, তাহলে গাছের শিকড়ের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে, যার ফলে ফুলক্রম বিলম্বিত হতে পারে।

আবহাওয়া: আবহাওয়ার অবস্থাও কৃষ্ণচূড়া গাছের ফুলক্রমকে প্রভাবিত করে। গাছটি গরম এবং রোদযুক্ত আবহাওয়াকে পছন্দ করে। যদি আবহাওয়া খুব ঠান্ডা বা মেঘলা থাকে, তাহলে ফুল আসতে দেরি হতে পারে বা ফুলের সংখ্যা কম হতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা খরাও ফুলক্রমকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

ছাঁটাই: গাছের ছাঁটাই ফুলক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি গাছটি নিয়মিত ছাঁটা না করা হয়, তাহলে এটি লম্বা এবং পাতাযুক্ত হয়ে উঠতে পারে, যার ফলে ফুল আসা কমে যেতে পারে। গাছটিকে সঠিক আকারে রাখার জন্য এবং ফুল উৎপাদন উন্নত করার জন্য নিয়মিত ছাঁটাই করা গুরুত্বপূর্ণ।

সার প্রয়োগ: সার প্রয়োগও কৃষ্ণচূড়া গাছের ফুলক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। গাছটি ফুল ফোটার জন্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়ামের মতো পুষ্টির প্রয়োজন। নিয়মিত সার প্রয়োগ করে গাছটিকে এই পুষ্টিগুলি সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ, যা ফুলক্রম উন্নত করতে এবং ফুলের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

সারসংক্ষেপ

কৃষ্ণচূড়া, বাংলার রাজপরিবারের ফুল, একটি অত্যাশ্চর্য দৃশ্য যা বসন্তের আগমনকে ঘোষণা করে। এই চিরসবুজ গাছটির ট্রাঙ্কগুলি একটি সুন্দর ছাপোলা আকার ধারণ করে, যা তার নামকে “ছত্রাক রানী” উপাধি দেয়। যখন কৃষ্ণচূড়ার গাছ ফুল ফোটে, শাখাগুলি তাদের আগুন-লাল বা নারঙ্গা-লাল মঞ্জরী দিয়ে একটি অত্যাশ্চর্য দৃশ্য তৈরি করে। কৃষ্ণচূড়া গাছগুলি বন্য এবং চাষ করা উভয় পরিবেশেই পাওয়া যায় এবং বাগান, পার্ক এবং রাস্তার পাশে একটি জনপ্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কৃষ্ণচূড়া, বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে গভীরভাবে জড়িত।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *