ওজন না বাড়ার কারন কী?
শরীরের ওজন বৃদ্ধি হওয়া একটি জটিল যা বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে ঘটে। অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না যে কেন হঠাৎ করেই আমাদের ওজন বাড়ছে। এই ওজন বৃদ্ধির পেছনে কখনো আমাদের জিনের ভূমিকা থাকে, কখনোবা বিপাকতন্ত্রে গোলমাল, কখনোবা থাইরয়েড সমস্যা, আবার কখনোবা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের অভ্যাস বা গ্রহণ করা ঔষুধ। তবে এইসব কারণগুলো ঠিক কীভাবে আমাদের ওজন বাড়িয়ে তোলে এবং সেগুলোর প্রতিকার কীভাবে করা যায়, তা আমরা অনেকেই জানি না। তাই এই লেখায় আমরা আলোচনা করব শরীরের ওজন বৃদ্ধির কারণগুলো নিয়ে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক হঠাৎ করেই ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ কী!
জেনেটিক কারণ
জেনেটিক ফ্যাক্টরগুলি আপনার ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু লোকের শরীরে এমন জিন থাকে যা তাদের মেটাবলিজমকে ধীর করে দেয়, যার ফলে তারা ক্যালোরি বার্ন করতে কষ্ট পায়। অন্যদের জিন রয়েছে যা তাদের ক্ষুধাকে উদ্দীপিত করে, যার ফলে তারা অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। এছাড়াও, কিছু জিনগুলি শরীরকে চর্বি জমাতে উৎসাহিত করতে পারে, বিশেষ করে পেট এলাকায়। যদি আপনার পরিবারের ইতিহাসে স্থূলতা থাকে, তবে আপনারও ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে। তবে, মনে রাখবেন যে জিনগুলি কেবল একটি ফ্যাক্টর এবং অন্য লাইফস্টাইল ফ্যাক্টরগুলির সাথে যুক্ত হলেই ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মেটাবলিজমের সমস্যা
ওজন না বাড়ার কারণ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মেটাবলিজম হচ্ছে দেহে ঘটা রাসায়নিক বিক্রিয়া যা শক্তি উৎপাদন এবং ব্যবহারের জন্য দায়ী। যদি এই মেটাবলিজমের প্রক্রিয়া সঠিক না হয়, তাহলে শরীর খাবার থেকে শক্তি সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না, যার ফলে ওজন বাড়ে না।
সাধারণত দুই ধরনের দেখা যায়: হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপারথাইরয়েডিজম। হাইপোথাইরয়েডিজমে থাইরয়েড গ্রন্থি যথেষ্ট পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করে না। এই হরমোন মেটাবলিজমকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মেটাবলিজম হ্রাস পায় এবং ওজন বাড়ে না। অন্যদিকে, হাইপারথাইরয়েডিজম হলে অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদিত হয়, যা মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে খাবার খেলেও ওজন বাড়ে না।
র অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বক ও চুলের শুষ্কতা এবং মেজাজ খিটখিটে থাকা। যদি তোমার এই লক্ষণগুলি থাকে এবং তুমি ওজন বাড়াতে না পারো, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ কর। শারীরিক পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তার র নির্ণয় করতে পারবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা যায়।
থাইরয়েডের সমস্যা
থাইরয়েড গ্রন্থি আমাদের শরীরের একটি ছোট গ্রন্থি যা গলার সামনের অংশে অবস্থিত। এই গ্রন্থি আমাদের শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এই গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ করে না তখন আমাদের শরীরে হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম হতে পারে। এই সমস্যায় আমাদের শরীরের বিপাক হার কমে যায় বা বেড়ে যায়। হাইপোথাইরয়েডিজমে আমাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং হাইপারথাইরয়েডিজমে আমাদের ওজন কমে যেতে পারে।
যদি তোমার মধ্যে এই সমস্যা থাকে তবে তোমার পক্ষে ওজন বাড়ানো কঠিন হতে পারে। এই সমস্যার কারণে তোমার শরীরে অল্প পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন হয় যা তোমার বিপাক হার কমিয়ে দেয় এবং তোমার শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে তোমার ওজন বাড়ানো কঠিন হতে পারে। এছাড়াও, এই সমস্যা তোমার হজম এবং পুষ্টি শোষণের ক্ষমতাও হ্রাস করে যা তোমার ওজন বাড়াতে বাধা দেয়।
জীবনযাপনের অভ্যাস
আজকালকার লাইফস্টাইলে দেখা যায়, ওজন কমানোর চেয়ে বেড়ে যাওয়ার দিকেই বেশি নজর যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই ওজন না বাড়ার জন্য স্বাস্থ্যকর গড়ে তোলা প্রয়োজন।
ওজন না বাড়ার জন্য মূলত তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হয়। প্রথমত, তোমাকে যে খাবার খাও, সেটির ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন খাবার বেছে নিতে হবে, যাতে তোমার দেহ ক্যালরি বার্ন করতে পারে এবং লম্বা সময় পর্যন্ত ক্ষুধা না লাগে। আর তৃতীয়ত, তোমার বয়স, শরীরের কাঠামো এবং কার্যক্রম অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই দরকার।
ওজন কমানোর জন্য কঠোর ডায়েটের পেছনে ছুটোছুটি করার পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর গড়ে তুললে ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তোমার সামগ্রিক স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে। তাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য আজ থেকেই সঠিক গড়ে নাও।
ঔষুধের প্রভাব
ওজন না বাড়ার জন্যে অনেক কারণ থাকতে পারে। জেনেটিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে হাইপারথাইরয়েডিজম, কুশিং সিনড্রোম এবং অন্যান্য বিপাকীয় ব্যাধি। এছাড়াও, কিছু ঔষধ ওজন না বাড়ার কারণ হতে পারে, যেমন থাইরয়েড হরমোন, ক্যাফিন এবং এপেড্রিন। কিছু খাদ্যাভ্যাসও ওজন না বাড়ার কারণ হতে পারে, যেমন কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত পরিমাণে ফাইবার খাওয়া এবং খাওয়া ব্যাধি।
অনেক ক্ষেত্রে, ওজন না বাড়ার কারণ অজানা। এটিকে ইডিওপ্যাথিক ওজন কমানো বলা হয়। যদি আপনি ওজন না বাড়ার সমস্যায় ভুগছেন, তবে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। তারা আপনার সাথে সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন এবং আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন। আপনার ডাক্তার আপনার কারণ নির্ণয় করতে রক্ত পরীক্ষা বা ইমেজিং পরীক্ষার মতো পরীক্ষা চাইতে পারেন।
অন্যান্য কারণ
ওজন না বাড়ার কারণে অন্যান্য বিষয়গুলিও দায়ী হতে পারে, যেমন:
- চিকিৎসাগত অবস্থা: কিছু চিকিৎসাগত অবস্থা, যেমন হাইপারথাইরয়েডিজম, ক্যান্সার, ক্রোন’স রোগ এবং ডায়াবেটিস, ওজন না বাড়ার কারণ হতে পারে।
- ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ঔষধ, যেমন থাইরয়েড হরমোনগুলি, ক্যাফিন এবং অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, ওজন কমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে সৃষ্টি করতে পারে।
- জীবনধারা: নিষ্ক্রিয় জীবনধারা, যেমন পর্যাপ্ত না খাওয়া বা যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম না করা, ওজন না বাড়ার কারণ হতে পারে।
- জিন: কিছু লোকের জিনেটিক্স তাদের ওজন বাড়তে বাধা দেয়।
- মানসিক স্বাস্থ্য: খাওয়ার ব্যাধি, যেমন অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা, ওজন না বাড়ার কারণ হতে পারে।
এই কারণগুলির যেকোনোটিই ওজন না বাড়ার কারণ হতে পারে। যদি তুমি ওজন না বাড়াতে পারছ না এবং তুমি নিশ্চিত না হও যে কেন, তাহলে তোমার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তারা তোমার লক্ষণগুলি নির্ণয় করতে এবং ওজন না বাড়ার মূল কারণ নির্ধারণ করতে সহায়তা করতে পারে।