আমাশয় হলে কি খাওয়া যাবে? জেনে নিন উত্তরটা এখানে!

পরিপাকতন্ত্রের অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল আমাশয়। খাদ্য হজম ও পুষ্টি শোষণের প্রাথমিক পর্বটি ঘটে আমাশয়ের ভিতরে। যদিও কঠিন হলেও, আমাশয় অনেক সময় কঠোর পরিশ্রমের কারণে নানা সমস্যায় ভুগতে পারে। আমাশয়ের সংক্রমণ বা প্রদাহের ফলে হয় আমাশয়ের সমস্যা। এই সমস্যা হলে পেটের মধ্যে ব্যথা, বদহজম, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। আমাশয়ের সমস্যায় ভুগলে সঠিক খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, খাবারের উপকারিতা ও ক্ষতিকারক প্রভাব আমাশয়ের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে অথবা ভালো করতে পারে। তাই, এই নিবন্ধে আমরা আমাশয়ের সমস্যা হলে কী খাবার খাওয়া উচিত এবং কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও, আমাশয়ের জন্য একটি নমুনা ডায়েটও দেওয়া হয়েছে। নিয়মিতভাবে এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণের মাধ্যমে আপনি আমাশয়ের সমস্যা দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারবেন।

আমাশয় হলে কী খাবার খাওয়া যাবে?

আমাশয় হলে কী খাবার খাওয়া যাবে, তা জানা প্রয়োজনীয়। আমাশয় হলে শরীর অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে যায়। তাই এ সময় এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর। এই সময়ে হালকা ডায়েট নেওয়া উচিত। প্রথম দিকে তরল খাবার খাওয়া শুরু করা উচিত। যেমন, ডাবের পানি, স্যালাইন, ডাবের জুস, চালের গান্জ ইত্যাদি। এগুলি শরীরে তরল সরবরাহ করবে এবং পেটও ভরে থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে নরম খাবার খাওয়া শুরু করা যেতে পারে। যেমন, ভাতের গান্জ, স্যুপ, খিচুড়ি ইত্যাদি। এগুলি সহজে হজম হয় এবং পেটেও ভালো লাগে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলের রস পান করা উচিত। এগুলি শরীরে তরল সরবরাহ করবে এবং আমাশয়ের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।

আমাশয়ের সংজ্ঞা এবং লক্ষণ

আমাশয় হলো বৃহদান্ত্রে সংক্রমণ, যা পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, জ্বর এবং বমি সৃষ্টি করে। আমাশয়ে আক্রান্ত হলে ডিহাইড্রেশন থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। আমাশয়ের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো:

  • পেটের পীড়া
  • পাতলা পায়খানা (দিনে 3 বা তার বেশি বার)
  • জ্বর
  • বমি
  • মাথাব্যথা
  • ক্লান্তি

আমাশয় হলে খাওয়া উচিত এমন খাবার

মূলত আমাশয় হলে ডায়রিয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। এই অবস্থায় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট হারিয়ে যায়। তাই এ সময় ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে পর্যাপ্ত তরল খাওয়া অত্যাবশ্যক। পানি ছাড়াও, তরল পুনরুদ্ধারের জন্য তুমি বেলের শরবত, ডাবের পানি, চালের গুঁড়া মেশানো লবণাক্ত লিকুইড এবং ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ওআরএস) খেতে পারো। এই সময় ফ্যাটি বা মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলো, কারণ এগুলো ডায়রিয়াকে আরও তীব্র করতে পারে। পরিবর্তে, হালকা, সহজপাচ্য খাবার খাও, যেমন খিচুড়ি, ভাত, স্যুপ এবং শাকসবজি। কলা এবং আপেলের মতো ফলও পেটে সহনশীল হতে পারে। তবে, দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এগুলো ডায়রিয়াকে আরও খারাপ করতে পারে।

আমাশয় হলে এড়িয়ে চলা উচিত এমন খাবার

আমাশয় হলে সাধারণত পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি ও মলদ্বারে রক্তপাতের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এসময় শরীর থেকে প্রচুর তরল পদার্থ বেরিয়ে যায়, যার ফলে শরীরে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই আমাশয় হলে পর্যাপ্ত তরল পদার্থ পান করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও, এই সময় কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

আমাশয় হলে এড়িয়ে চলার উচিত এমন কিছু খাবারের মধ্যে রয়েছে:

  • দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই, পনির ও আইসক্রিমের মতো দুগ্ধজাত খাবারে থাকে ল্যাকটোজ, যা আমাশয়ে ব্যথা ও ডায়রিয়াকে আরও খারাপ করতে পারে।
  • ফ্যাটি খাবার: ফ্রাই করা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট, যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে এবং ডায়রিয়াকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • মশলাদার খাবার: মশলাদার খাবারে থাকে ক্যাপসাইসিন, যা পাকস্থলীকে উত্তেজিত করতে পারে এবং আমাশয়ের লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করতে পারে।
  • কাচা শাকসবজি ও ফল: কাচা শাকসবজি ও ফলে থাকে ফাইবার, যা আমাশয়ের সময় হজম করা কঠিন হতে পারে এবং ডায়রিয়াকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: ক্যাফে, চা এবং এনার্জি ড্রিংকের মতো ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পাকস্থলীকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং ডায়রিয়াকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • অ্যালকোহল: অ্যালকোহল পাকস্থলীকে উত্তেজিত করতে পারে এবং ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে, যা আমাশয়ের লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করতে পারে।

আমাশয়ের জন্য খাবারের নমুনা ডায়েট

আমাশয়ের সমস্যায় ভুগলে খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। এই সময় শরীর থেকে প্রচুর পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে যায়, তাই ডিহাইড্রেশন রোধ করতে প্রচুর তরল পান করা জরুরি। পানির পাশাপাশি নারকেল পানি, ফলের রস কিংবা লবণ ও চিনির গুঁড়ো মেশানো পানীয় পান করা যেতে পারে। খাদ্য তালিকায় সহজপাচ্য, কম চর্বিযুক্ত খাবার রাখা উচিত, যা পেটে হজম করা সহজ। এই ধরনের খাবারের মধ্যে রয়েছে সিদ্ধ দই, ভাতের গঞ্জি, মসলাহীন স্যুপ, পেঁপে, কলা কিংবা সিদ্ধ ডিম। তবে দুগ্ধজাত দ্রব্য, কাঁচা শাকসবজি, ফল, মসলাদার খাবার, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়াও, ছোট ছোট পরিমাণে ঘন ঘন খাওয়া ভালো, কারণ একসাথে অনেক খাবার খেলে পেটে অস্বস্তি হতে পারে। খাওয়ার পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং শরীরচর্চা এড়িয়ে চলা উচিত।

আমাশয় হলে খাওয়াদাওয়ায় সাবধানতা

আমাশয়ের সময় পেটের গণ্ডগোলের কারণে ক্ষিদে থাকে না। তবে পেট খালি রাখলেও সমস্যা হতে পারে। তাই এ সময় পেটে হালকা কিছু খেতে হবে। সেক্ষেত্রে ডাবের পানি, মুলাগাছার মূলের রস, শসা, পুদিনাপাতা, আদা, মৌরি, কলা, চালের মাড় ইত্যাদি খেতে পারো। তবে এ সময় তেল-মশলাদার, ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

যখন আমাশয় হয়, তখন আমাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় কিছু খাবার খাওয়া আমাদের অবস্থাকে আরও খারাপ করতে পারে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

আমাশয় হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তরল পদার্থ গ্রহণ করা। পানি, ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক এবং স্যুপের মতো তরল পদার্থ আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং খনিজ পদার্থের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ফল এবং সবজি, এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো আমাদের পাচনতন্ত্রকে আরও জ্বালাতন করতে পারে।

আমাশয়ের সময় সহজপাচ্য খাবার খাওয়া ভালো। এতে ভাত, টোস্ট, সিদ্ধ আলু, কলা এবং আপেল অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো আমাশয়ের লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করতে পারে। চর্বিযুক্ত এবং ভাজা খাবারও এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো আমাদের পাচনতন্ত্রের জন্য খুব ভারী হতে পারে। পরিবর্তে, গ্রিল করা বা বেক করা মাছ, মুরগি বা টোফু খেতে পারেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *