আর্কিমিডিস: কোন দেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী?
আপনাদের সকলকেই আজকে আমি নিয়ে আসলাম ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আর্কিমিডিসের জীবন ও অবদান নিয়ে। গ্রিক বিশ্বের এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ, প্রকৌশলী এবং উদ্ভাবকের জীবন কাহিনী ও অবিস্কার আজও বিশ্ববাসীকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। আজকের আর্টিকেলে, আমরা আলোচনা করবো আর্কিমিডিসের জন্ম ও শিক্ষা, তার অসাধারণ আবিষ্কার, তার অবদানের গুরুত্ব, তার সময়কাল, তার মৃত্যু এবং কেন তার অবদান আজও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে এতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়েও আলোকপাত করবো। আর্কিমিডিসের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আমার সাথেই থাকুন।
আর্কিমিডিসের জন্ম ও শিক্ষা
আর্কিমিডিসের জন্ম এবং শিক্ষা
আমি গ্রীসের সিরাকিউজ শহরে জন্মেছি। আমার জন্ম তারিখ সম্পর্কে কোন নির্দিষ্ট তথ্য নেই, তবে সাধারণত এটি 287 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি বলে মনে করা হয়। আমার পিতার নাম ছিল ফিডিয়াস, যিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন।
আমি ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী ছিলাম। আমি আলেকজান্দ্রিয়ায় গিয়ে বিখ্যাত গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইউক্লিডের অধীনে পড়াশোনা করি। আমি গণিত, জ্যামিতি, পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতো বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করি। আমার শিক্ষা আমার পরবর্তীকালের আবিষ্কার এবং আবিস্কারের ভিত্তি স্থাপন করে।
আর্কিমিডিসের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার
আর্কিমিডিস প্রাচীন গ্রিসের একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞানী, গণিতবিদ এবং প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি সিরাকিউজে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে ইতালির সিসিলির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। আর্কিমিডিস তার বিভিন্ন আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত, যার মধ্যে রয়েছে উদ্বাসন বলের আর্কিমিডিসের নীতি, লিভারের নীতি এবং আর্কিমিডিস স্ক্রু।
আর্কিমিডিসের সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কারের একটি হল উদ্বাসন বলের আর্কিমিডিসের নীতি। এই নীতিটি বলে যে কোনও তরলে নিমজ্জিত বস্তুর উপর তরল দ্বারা প্রযুক্ত উদ্বাসন বল বস্তুর দ্বারা স্থানচ্যুত তরলের ওজনের সমান। এই নীতিটি জাহাজ ভাসার মূলনীতি। আর্কিমিডিসের নীতি প্রথম শতাব্দীতে গ্রিক গণিতবিদ ও ভূগোলবিদ হেরন কর্তৃক তার “মেকানিক্স” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল লিভারের নীতি। এই নীতিটি বলে যে একটি লিভারের উপর প্রয়োগ করা বলের উৎপাদ বিন্দু থেকে বলের দূরত্বের সমান। লিভারের নীতিটি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন স্ক্রুজ্যাক, ক্রেন এবং ওজন স্কেল। আর্কিমিডিসের নীতি প্রথম শতাব্দীতে গ্রিক গণিতবিদ ও প্রকৌশলী প্যাপাস কর্তৃক তার “মেকানিক্স” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।
আর্কিমিডিসের আরেকটি আবিষ্কার হল আর্কিমিডিস স্ক্রু। এই যন্ত্রটি জল বা অন্যান্য তরল উত্তোলন করতে ব্যবহৃত হয়। আর্কিমিডিস স্ক্রু একটি সর্পিল টিউবের মতো, যা একটি কেন্দ্রীয় অক্ষের চারপাশে মোড়ানো থাকে। যখন স্ক্রুটি ঘোরানো হয়, তখন তরল সর্পিল টিউবের খাঁজগুলি দিয়ে উপরে উঠে আসে। আর্কিমিডিস স্ক্রুটি প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং আজও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আর্কিমিডিসের অবদানের গুরুত্ব
আমি আর্কিমিডিসকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীদের একজন হিসাবে বিবেচনা করি। তাঁর অবদানগুলি বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে, যার মধ্যে গণিত, পদার্থবিদ্যা এবং প্রকৌশল অন্তর্ভুক্ত। আর্কিমিডিসের সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি হল বুয়ান্সির মূলনীতি, যা তরলে নিমজ্জিত কোনো বস্তুর উপর ভাসমান শক্তির বর্ণনা করে।
তিনি উত্তোলন শক্তির এই মূলনীতিটি আবিষ্কার করেছেন যখন তিনি একটি স্নানে বসেছিলেন এবং লক্ষ্য করেছিলেন যে তার শরীরের উপর ভাসমান শক্তিটি তার ওজনের সমান। এই আবিষ্কারটি জাহাজ নির্মাণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আর্কিমিডিস হাইড্রোস্ট্যাটিক্সের আবিষ্কারের জন্যও দায়ী, যা তরলের আচরণের অধ্যয়ন।
তিনি লিভার এবং পুলি সহ অনেক যান্ত্রিক उपकरण আবিষ্কার করেছেন, যা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে। তাঁর গাণিতিক অবদানগুলিও উল্লেখযোগ্য, যার মধ্যে পাই এবং বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ধারণের সূত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সামগ্রিকভাবে, আর্কিমিডিসের অবদানগুলি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং তাকে সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীদের একজন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
আর্কিমিডিসের সময়কাল
আর্কিমিডিস গ্রিক সিরাকিউজের বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি ২৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ২১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমানদের দ্বারা সিরাকিউজ আক্রমণের সময় নিহত হয়েছিলেন। তিনি গণিত, পদার্থবিদ্যা, প্রকৌশল, এবং জ্যোতির্বিদ্যা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য বিখ্যাত। তিনি বুঝেছিলেন যে ভাসমান বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল তার দ্বারা সরানো তরলের ওজনের সমান এবং তার দ্বারা সরানো তরলের ওজনের কেন্দ্র বস্তুর গুরুত্ব কেন্দ্রের নিচে অবস্থিত।
এই আবিষ্কারকে আর্কিমিডিসের নীতি বলা হয়। তিনি লিভারের নীতিও আবিষ্কার করেছিলেন, যা ভারী বস্তু তোলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি গোলকের আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের গাণিতিক সূত্রও উদ্ভাবন করেছিলেন। তিনি সিরাকিউজের রাজা হায়ারোর জন্য একটি বিশাল জাহাজ তৈরি করেছিলেন, যা “সিরাকিউসিয়া” নামে পরিচিত। এই জাহাজটি এত বড় ছিল যে এতে ৬০০ জন লোকের বাসস্থান ছিল এবং এতে একটি গ্রন্থাগার, একটি মন্দির এবং একটি বাগান ছিল।
আর্কিমিডিসের মৃত্যু
আর্কিমিডিস একজন বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ, পদার্থবিদ, প্রকৌশলী, আবিষ্কারক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি সিসিলিতে সিরাকিউজে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই মারা যান। তিনি রোমান সেনাবাহিনীর আক্রমণের সময় মারা যান, যখন তিনি একটি গাণিতিক সমস্যা সমাধানে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে তিনি আক্রমণকারীদের উপস্থিতি খেয়াল করেননি। কিংবদন্তি অনুসারে, একজন রোমান সৈন্য তাকে হত্যা করেছিল যখন তিনি “আমার বৃত্তগুলো নষ্ট করো না” বলে চিৎকার করেছিলেন। এটি বিখ্যাত আর্কিমিডিসের শেষ কথা হিসেবে পরিচিত।
সিদ্ধান্ত
আর্কিমিডিস কে কোন দেশের বিজ্ঞানী ছিলেন তা জানার আগে, আসুন জেনে নেওয়া যাক কে ছিলেন আর্কিমিডিস। আর্কিমিডিস ছিলেন একজন বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ, পদার্থবিদ, প্রকৌশলী এবং উদ্ভাবক। তিনি প্রায় 287 বিসি থেকে 212 বিসি পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। আর্কিমিডিস সিরাকিউজের একজন নাগরিক ছিলেন, যা ছিল গ্রীক উপনিবেশের রাজধানী এবং বর্তমান সিসিলিতে অবস্থিত। সিরাকিউজ সাইক্রাসের আইল্যান্ডে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর শহর ছিল।